ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারের ঋণ হ্রাস করা প্রয়োজন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
‘বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারের ঋণ হ্রাস করা প্রয়োজন’

ঢাকা: দেশের আর্থিকখাতের পাশাপাশি বেসরকারিখাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘোষিত মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক নীতি হিসেবে মনে করেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।  

রোববার (১৮ জুন)  ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি কথা বলেন।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষে মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাহিদা, আমদানি কার্যক্রমে নজরদারি অব্যাহত রাখা ও স্থিতিশীল বাণিজ্য পরিবেশ নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রেপো ও রিভার্স রেপোর হার যথাক্রমে ৬.৫% ও ৪.৫% বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো ও রিভার্স রিপো রেট-এর কার্যকারিতা নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই, কারণ ইতোপূর্বেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যা  থেকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যায়নি।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদের হারের সীমা ৯% প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যবস্থার ফলে ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণের সুদের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটি বর্তমান বৈশ্বিক অস্থির অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। পাশাপাশি এ ধরনের উদ্যোগ বিশেষকরে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি করবে।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে ৪৩%, যেটি আগের অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ছিল ৪০%। অপরদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে বেসরকারিখাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে ১০.৯%, যেটি বিগত অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ছিল ১১%। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পেয়েছে।  

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মনে করেন, সরকারি খাতে অধিক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ, বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করবে। সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ হ্রাসের জন্য সরকারি ব্যয় কৃচ্ছ্রসাধন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনয়ন এবং অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাত হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনতে কর আহরণের মাত্রা বাড়ানো ওপর আরও বেশি হারে জোরারোপ করা উচিত, এতে করে ব্যাংক খাতের ওপর সরকারের নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।  

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনয়নে ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার মনে করেন, সমন্বিত মুদ্রা বিনিময় হার দেশের মুদ্রাবাজার কে স্থিতিশীল করবে। যদিও, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। ইআরকিউ এনকেশমেন্ট লিমিট ৫০% হ্রাস এবং ইডিএফ সুদ হার ৪.৫% করা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে, আশা করা যায়। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকল্পে, হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা রোধকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।

খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ হতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ হ্রাস করা সম্ভব। খেলাপি ঋণ হ্রাসের জন্য সরকার গৃহীত ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ মূল্যায়নে কমিটি প্রণয়নের জন্য ঢাকা চেম্বার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করছে, এমতাবস্থায় ডিসিসিআই সভাপতি খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩

এসএমএকে/ এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।