নাটোর: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম যোগানদার নাটোরের চকবৈদ্যনাথের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার আড়ত। ট্যানারি মালিকদের মোট চাহিদার ৫০ ভাগ চামড়া যায় এখান থেকে ঢাকায়।
আর দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জেলার লাখ লাখ পিস চামড়া আসে এই আড়তে। চামড়া শিল্পের অন্যতম বৃহত্তম কাঁচামালের যোগানদাতা হিসেবে নাটোর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নীরবে নিভৃতে অবদান রেখে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। ঈদ আসলেই ফড়িয়া, বেপারী আর পাইকারদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো আড়ত এলাকা।
এবার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১৬ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় সরকার নির্ধারিত দরেই চামড়া কেনা-বেচা করবেন এমনটি জানিয়েছেন তারা।
তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা ৬০ কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতি বছরই খানিকটা বেকায়দার পড়তে হয় স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের। মৌসুম শুরু হলেই শুরু হয়ে যায় হাহাকার। এরপরও হাল ছাড়ছেন না ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ট্যানারি মালিকদেরও চামড়া কেনার জন্য আকৃষ্ট করছেন তারা। তবে আশার কথা-দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে নাটোরে গুণগত মানসম্পন্ন চামড়া পাওয়া যায় বলে ট্যানারি মালিকদের দৃষ্টি এখানকার চামড়া আড়তে।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার আড়ত নাটোরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি আড়ত রয়েছে। আড়তগুলোতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বগুড়া, পাবনা, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, কুষ্ঠিয়াসহ সারাদেশের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জেলার চামড়া আসে।
তারপর সেই কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় দেশের মোট ৫০ ভাগ চামড়া নাটোরের চামড়ার আড়ত থেকে ট্রাকযোগে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানো হয়।
চামড়া ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কোরবানির চামড়া কেনার জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করছেন এ বছর নাটোরে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া বেচাকেনা হবে। সরকার এবার ঢাকার বাহিরে চামড়ার দর অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি বেঁধে দিয়েছেন। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া কেনা-বেচা করতে পারলে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়ার প্রধান উৎস কাঁচা লবণের দাম কমালে আরো লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
চামড়া ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদের জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা আড়ত প্রস্তুত করেছি। আশা করছি, এ বছর চামড়ার ব্যবসা ভালো হবে। সেই সঙ্গে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বৃহত্তর নাটোরের আড়তে কাঁচা চামড়া আসবে। প্রত্যেক আড়তগুলোতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করছেন ব্যবসায়ীরা।
নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া কেনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ১৬ লাখ পশুর কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। চামড়া যাতে নষ্ট বা পচে না যায় সেদিকে নজর দিতে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। চামড়া আড়তে আসার সঙ্গে সঙ্গে চামড়াতে লবণ দিয়ে যেন সংরক্ষণ করা হয়। আশা করছি, ব্যবসায়ীরা এবার তাদের ন্যায্য দাম পাবেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী চামড়ার আড়তে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ফড়িয়া ব্যবসায়ীসহ ট্যানারি মালিকরা যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে কেনা-বেচা করতে পারে, সেজন্য পুলিশ তৎপর থাকবে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সকল প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভূঞা বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার দেওয়ার পাশাপাশি চামড়া নিয়ে কেউ যাতে কোনো প্রকার কারসাজি করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রাখা হবে। জাল টাকা রোদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাটোরের চামড়া ব্যবসার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে জেলা প্রশাসন সদা প্রস্তত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
এসএম