ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফের বেড়েছে কাঁচা মরিচের ‘ঝাল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
ফের বেড়েছে কাঁচা মরিচের ‘ঝাল’

ঢাকা: ভারত থেকে আমদানি শুরুর পর রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছিল কাঁচা মরিচের দাম। কিন্তু দুইদিন যেতে না যেতেই ফের বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির ঝাল।

বুধবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল কাঁচা বাজার, মধুবাগ কাঁচা বাজার, মিরপুর-১ এর শাহ আলী কাঁচা বাজার ঘুরে এবং ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা যায়।

এসব বাজারে বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। অথচ দুইদিন আগেও এসব বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

আমদানি বন্ধ, খরা ও অতিবৃষ্টির অজুহাতে কোরবানির ঈদের আগে হঠাৎ করে বাড়তে থাকে কাঁচা মরিচের দাম। এক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম গিয়ে ঠেকে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ঈদের ছুটি শেষে গত রোববার (২ জুলাই) থেকে দেশে কাঁচা মরিচ ঢুকতে শুরু করলে একদিনেই এর দাম নেমে আসে। সোমবার (৩ জুলাই) রাজধানীর বাজারগুলোতে অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয় কাঁচা মরিচ। কিন্তু এখন আবার বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম।

ফের কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার জন্য সরবরাহের ঘাটতিকেই দুষছেন বিক্রেতারা। যদিও ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেট করেই এ পণ্যটির বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা রহিম বলেন, ৩৮০ টাকা করে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কিনে এনেছি। বিক্রি করছি ৪০০ টাকায়। ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসছে ঠিকই। কিন্তু সেটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আবার দেশি মরিচও বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, সেটি দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। তাই দাম আবার বাড়ছে।

মো. জাকির নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, কাঁচামালের দাম সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যত বেশি সরবরাহ করা হবে, দাম তত কম হবে। সরবরাহ কমলে, দাম বাড়বে। গত রোববার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির পর বাজারে সরবরাহ বেড়ে গিয়েছিল। তাই সোমবার বাজারে দাম কম ছিল। এখন আবার সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেড়েছে।

আমদানি চালু থাকার পরও সরবরাহের ঘাটতি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে লাগবে ১০ টন, সেখানে আসছে ৫ টন। যার কারণে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। তাই আমদানি করার পরও সরবাহের ঘাটতি আছে।

এদিকে কাঁচা মরিচের আকাশচুম্বী দাম হওয়া সত্ত্বেও লোকসান গুনতে হচ্ছে পাইকারি বিক্রেতাদের। তাদের দাবি, বেশি দামের কারণে মানুষ কাঁচা মরিচ কিনছে না। আবার মরিচ বেশিদিন রাখাও যায় না। তাই বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

মো. হেলাল উদ্দিন নামে কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি কাঁচা মরিচ বিক্রেতা বলেন, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) কাঁচা মরিচ কিনতে হয়েছে এক হাজার ৮০০ টাকায়। বিক্রি করতে হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকায়। প্রতি পাল্লায় ৫০ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। তারপরও ক্রেতা নেই।

আবুল মনসুর নামের আরেক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ৩৮০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ কিনে ৩৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ কাঁচামাল রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই লোকসান দিয়ে হলেও বিক্রি করে দিচ্ছি। কিছু করার নেই।

অন্যদিক ক্রেতারা বলছেন, সরকারের বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সিন্ডিকেট করে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তি শুধু সাধারণ মানুষেরই হয়।

সকালে কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. ইউসূফ। কিন্তু আকাশচুম্বী দামের কারণে কাঁচা মরিচ না কিনেই ফিরে যান তিনি।

মো. ইউসূফ বলেন, এ কয়দিন দামের কারণে কাঁচা মরিচ কিনিনি। শুকনা মরিচ দিয়েই রান্না-বান্নার কাজ চলছে। খবরে দেখলাম কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। তাই আজ এলাম। কিন্তু এখন তো দেখি সে আগের মতোই দাম বেশি। তাই না কিনেই চলে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কাঁচা মরিচের বাজারের এ অবস্থা। সরকারের এসব নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই। যদি সরকার ঠিকমতো বাজার মনিটরিং করতো তাহলে এভাবে বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তো না।

শেখ রুমানা নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীদের মানবিকতা নেই। এলসি খোলার পরও কেন কাঁচা মরিচের দাম বাড়বে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের বাঁচার মতো অবস্থা নেই। বিশ্বের প্রতিটি দেশে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শুধু আমাদের দেশেই এটি ঠিকঠাক মতো হয় না। কোনো কিছুর দাম বাড়লে দুইদিন মনিটরিং করা হয়, তারপর আবার আগের অবস্থা। এমন হলে দাম বাড়তে থাকবে এটিই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।