ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্রেতাদের নাগালের বাইরে বিদেশি ফল

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
ক্রেতাদের নাগালের বাইরে বিদেশি ফল

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন দেশি মৌসুমী ফলের সরবরাহ। ফলে এখন বিদেশি ফলের চাহিদা বাড়ার কথা।

কিন্তু আমদানি খরচসহ নানা কারণে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতার নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে এ বিলাসী ফল। এতে ইচ্ছে থাকলেও শখ মেটাতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা।

বিক্রেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে বিদেশি ফলের। সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে এসব ফলের। এছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের কাছে টাকা না থাকায় চাইলেও বিদেশি ফল কিনতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। তাই বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি ফল কিনেই চাহিদা মেটাচ্ছেন ক্রেতারা।

তবে ফল আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আগে আমদানি কম হলেও, এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি আছে। তবে আমাদনির খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ফলের দাম বেশি। এছাড়া বর্তমানে দেশি ফলে বাজার সয়লাব থাকায় বিদেশি ফলের চাহিদা কমেছে।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, চাইলেও আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে বিদেশি ফল কিনতে পারছেন না তারা। তাই দেশি ফল দিয়েই চাহিদা পূরণ করছেন। তবে দেশি ফলের দামও খুব একটা কম নয়।

শুক্রবার (৭ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ফুজি আপেল ২৫০ টাকা, গালা আপেল ২৮০ টাকা, সবুজ আপেল ২৫০ টাকা, কমলা২৬০ টাকা, মাল্টা ২০০ টাকা, আনার ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, লাল আঙুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সাদা আঙুর ৪০০ টাকা, নাশপতি ২৯০ টাকা, নাগফল ৩২০ টাকা, চাইনিজ কমলা ২৫০ টাকা, ড্রাগন ফল ১৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অথচ বছর খানেক আগেও প্রতি কেজি ফুজি আপেল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, গালা আপেল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সবুজ আপেল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, মাল্টা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আনার ২০০ থেকে ৩৬০ টাকা, লাল আঙুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, সাদা আঙুর ২০০ থেকে ২২০ টাকা, নাসপতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, নাগফল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, চাইনিজ কমলা ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

শুধু এসব রসালো ফলই নয়, দাম বেড়েছে খেজুরেরও। বর্তমানে প্রতি কেজি ইরানি মরিয়ম খেজুর ৮৫০ টাকা, সৌদি মরিয়ম খেজুর ১১০০ টাকা, তিউনিশিয়া খেজুর ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কালমি খেজুর ৬৫০ টাকা, দাবাস খেজুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, জাহিদী খেজুর ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, বড়ই খেজুর ৩২০ টাকা, আম্বার খেজুর ৯০০ টাকা, আজোয়া ১০০০ টাকা, আদম খেজুর ৬৫০ টাকা, সুফরি খেজুর ৬০০ টাকা, মেডজুল খেজুর ১৫০০ টাকা, সাদা খুরমা খেজুর ৩২০ টাকা, কালো খুরমা খেজুর ৩০০ টাকা, মবরুম খেজুর ১১০০ টাকা, সুক্কারী খেজুর ৭৫০ টাকা, আলজেরিয়ান খেজুর ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মদিনা ফ্রুটস গ্যালারির বিক্রেতা শরীফুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কম। এছাড়া পরিবহন খরচ, এলসির দাম বেশি হওয়ার কারণে বিদেশি ফলের দাম বেশি। দেশে উৎপাদিত জিনিসপত্রের দামই তো বেশি। বিদেশি ফলের আর দোষ কি? সামনে বিদেশি ফলের দাম আরও বাড়তে পারে।

দাম বাড়ায় বিদেশি ফলের চাহিদা কমেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ বিদেশি ফল খায় বিলাসিতা করে। যখন অন্যান্য সবকিছুর চাহিদা মিটিয়ে হাতে টাকা থাকে তখন বিদেশি ফল কিনে। কিন্তু মানুষ এখন নিত্যপণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। এসব বিলাসী ফল কিনবে কিভাবে? বেচাবিক্রি আগের তুলনায় কমেছে। আগে ফল বিক্রি করে হাতে কিছু টাকা থাকতো। সঞ্চয় করতে পারতাম। কিন্তু এখন কোনোমতে টিকে আছি।

মো. তানভীর নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, এলসি ঠিকমতো না হওয়ায় বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে। এছাড়া আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বিদেশি ফল মজুদ করে দাম বাড়ায়। যদিও বেচাবিক্রি কমেনি। মানুষ যেটির দাম বাড়ে, সেটিই কিনে। প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয় আমার।

তবে বাদামতলী ফল মার্কেটের বিদেশি ফলের আমদানিকারক আজমীন ফ্রুটস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. রায়হান হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশ থেকে ফল আমদানি এখন স্বাভাবিক আছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহও আছে। তবে আমদানি খরচ বাড়ায় বিদেশি ফলের দাম কিছুটা বেশি। আগে ১৫ কেজির এক কার্টুন আপেল আনতে ট্যাক্স দিতে হতো ৭০০ টাকা, সেটা এখন দিতে হয় ১৪০০ টাকা। ২০ কেজির এক ক্যারট আনার আনতে ট্যাক্স দিতে হতো ১৮০০ টাকা, সেটি এখন দিতে হয় ২২০০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্সই তো দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দাম তো বাড়বেই। শুধু রসালো ফল নয়, খেজুরের আমদানি খরচও বেড়েছে। তাই আমরা খেজুর আমদানি কমিয়েছি।

দাম বাড়ার কারণে বেচাকেনা কিছুটা কমেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাজারে এখন দেশি ফলের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বিদেশি ফলের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ সেটি না কিনে দেশি ফল কিনছে।

আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে ফল মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাইলেও ফল বেশিদিন মজুদ করা যায় না। কারণ ফল একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। নইলে নষ্ট হয়ে যায়। যদি কেউ ফল মজুদ করে তাহলে তাকে বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে, সংরক্ষণ খরচ দিতে হবে, মজুদের জায়গা লাগবে। নইলে ফল নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের দেশে বেশিদিন ফল সংরক্ষণ করার মতো কোনো স্টোরেজ নেই। তাই মজুদ করারও সুযোগ নেই। এছাড়া বাদামতলীতে কোনো সিন্ডিকেট নেই।

এদিকে, দাম বাড়ার কারণে ইচ্ছা থাকলেও বিদেশি ফল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে আপেল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সৈয়দ মঞ্জুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে বিদেশি ফলের সংকট নেই। তারপরও ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এলসি বন্ধ ডলার সংকটের যেসব কথা ব্যবসায়ীরা বলে এগুলো মিথ্যা কথা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এসবের দাম বাড়ায়। শুধু বিদেশি ফল নয় দেশি ফলেরও দাম বেশি। বাচ্চারা দেশি ফল খেতে চায় না, তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে বিদেশি ফল কিনতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।