ঢাকা: রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বন্দর ব্যবস্থাপনা আরও সহজীকরণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন পোর্ট অ্যান্ড শিপিংয়ের প্রথম সভায় তারা এ দাবি জানান।
কমিটির সদস্যরা জানান, চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস অর্থাৎ ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে, পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির জটিলতা কমিয়ে আনা জরুরি।
তাদের মতে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি, জেটির সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, হেভি লিফট স্থাপন, কাস্টমস এবং এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা দূরীকরণ, রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের সময় (লিডটাইম) হ্রাস, বন্দরগুলোতে টেস্টিং ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কনটেইনার খালাসের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক চার্জ আদায় রোধ করা গেলে রপ্তানি খাত উপকৃত হবে।
কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি খাত। আগামীতে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
পণ্য পরিবহন, জাহাজীকরণ ও কাস্টমসসহ পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কমিটির সদস্যদের কাছে সুনির্দিষ্ট মতামত ও পরামর্শ চান এফবিসিসিআই পরিচালক এবং পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ এএম মাহবুব চৌধুরী।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, পোর্ট এবং শিপিং সেক্টরে ৮ থেকে ১০টি স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) রয়েছে।
সব পক্ষের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরির মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
বৈঠকে আলোচ্য মতামতগুলো লিখিত আকারে এফবিসিসিআইতে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান মো. আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীদের এসব সমস্যা নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এফবিসিসিআই আলোচনা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
বিকেলে এফবিসিসিআইতে অনুষ্ঠিত রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশের বাজারে ডলারের মূল্য বৈষম্য কমিয়ে আনার দাবি জানান ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী যেখানে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা কিংবা ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কেনে, পণ্যের কাঁচামালসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে সেখানে ব্যবসায়ীদের প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২০ টাকা থেকে ১২২ টাকা গুণতে হয়। যা রীতিমতো বৈষম্য।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় এই রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
রপ্তানির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানসহ রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং সম্প্রসারণে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এ সময় তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকে দেয়া প্রণোদনা বন্ধ করা হলে রপ্তানি খাত ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
রপ্তানি বিষয়ক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান মেহদী আলী। তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশ্বেজুড়ে ব্যবসা স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভা দু’টিতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক সৈয়দ মো. বখতিয়ার, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান আহমেদ সাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী, এফবিসিসিআইর পরিচালক এবং রপ্তানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ সালমা হোসেন এ্যাশ, এফবিসিসিআইর মহাসচিব মো. আলমগীর প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
এআর/টিসি