ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মাব্যাংকের শত কোটি টাকা নাফিজ সরাফাতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
পদ্মাব্যাংকের শত কোটি টাকা নাফিজ সরাফাতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে

ঢাকা: ২০০৭ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছিল স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি খাতের ছয় ব্যক্তি এটির উদ্যোক্তা ছিলেন।

তবে প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন আবেদন অনুমোদনের বিষয়ে বিএসইসি কোনো সাড়া দেয়নি। কিছুদিন পর এ প্রতিষ্ঠান কয়েক কোটি টাকায় কিনে নেয় চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন কোম্পানি সফটহরাইজন (প্রা.) লিমিটেড। সফটহরাইজনের সিংহভাগ মালিকানা ছিল নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সাহিদ চৌধুরী ও বোন আনিজা চৌধুরীর নামে।

যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটির নিবন্ধন নেওয়া হয় ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির মূলধন ২০ কোটি টাকা। এটির প্রায় সাড়ে ৯ লাখ শেয়ার রয়েছে নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী ও বোনের নামে খোলা কোম্পানি সফটহরাইজনের হাতে। আর পাঁচ হাজার শেয়ার রয়েছে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছে। নাফিজ সরাফাতের দীর্ঘদিনের সহকর্মী এহসানুল কবির ১০০ শেয়ারের মালিক। তিনি বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে রয়েছেন।

২০০৭ সালে এটি আরজেএসসির নিবন্ধন পেলেও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবার আবেদন করা হয় ২০১৩ সালে। অর্থাৎ নাফিজ সরাফাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা কেনার পর এ আবেদন করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত নিবন্ধন দেওয়ার জন্য বিএসইসিতে প্রভাব খাটায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের তৎকালীন শীর্ষ এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার তৎপরতায় ২০১৪ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধনসনদ পায় স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট। পরে এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে আর্থিক নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটান নাফিজ সরাফাত। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নাফিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা পদ্মা ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা বিনিয়োগের নামে এই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিতে সরিয়ে নেওয়া।

বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড বা এসইএমএলের তত্ত্বাবধানে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এই চার ফান্ডের প্রাথমিক আকার ৩২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি তহবিল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এগুলো হলো এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়া ফান্ড এবং এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড। এই তিন ফান্ডই মেয়াদি তহবিল। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় এসইএমএল পিবিএসএল ফিক্সড ইনকাম ফান্ড নামে ১০০ কোটি টাকার বেমেয়াদি একটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, যেটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। এসব ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের নানা অভিযোগ এখন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গত মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হককে। অপর দুই সদস্য হলেন বিএসইসির উপপরিচালক রফিকুন নবী ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা।

স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটির পরিচালনায় থাকা চারটি তহবিলের মধ্যে দুটিরই উদ্যোক্তা বা স্পনসর পদ্মা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এই পদ্মা ব্যাংকেরই চেয়ারম্যান ছিলেন নাফিজ সরাফাত। অর্থাৎ নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেরই আরেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে অর্থ সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। আর্থিক অনিয়মের কারণে পদ্মা ব্যাংক যেখানে বছরের পর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, সেখানে বিনিয়োগের নামে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে শতকোটি টাকার বেশি নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন নাফিজ সরাফাত।

এদিকে বিকল্প বিনিয়োগের নামে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে তহবিলের ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে কমিটিকে বলা হয়েছে। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে তথ্যপ্রমাণ যাচাই বাছাই, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে কি না, তহবিলের ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য যাচাই বাছাই, তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমার বিপরীতে কী পরিমাণ সুদ পেয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে কী পরিমাণ মুনাফা পেয়েছে- এসব তথ্যও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে। এর বাইরে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অনিয়মও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।