ঢাকা: পলিথিন ব্যবহার নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সময় চান প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীরা। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রয়োজনে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হুট করেই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সময় চেয়েছেন ছয় মাস থেকে এক বছর।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ব্যবসায়ীরা।
গত ২০ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ১৭টি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য ফেজ আউট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়। প্রথম অবস্থায় সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতই এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, পলিথিন ব্যবহার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই। হুট করেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা করে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিয়ে যদি এটি করা হয়, তাহলে বিষয়টি ভালো হবে এবং ব্যবসায়ীরাও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, বাড়ির মালিকদের ভাড়া বাড়ানো, আগের সরকারের সময়ের চাঁদাবাজি, সরকারের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই। এর মধ্যে যদি ব্যবসার ওপর নতুন আঘাত আসে, তাহলে সরকারের ট্যাক্স কমে যাবে, খাত নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, তিনি পরিস্থিতি অনুধাবন করবেন। বর্তমান পরিস্থিতি অনেক নাজুক, প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা কিন্তু পথে নেমে যাবে।
লিখিত বক্তব্যে প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং প্লাস্টিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক সামিম আহমেদ বলেন, সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পরিবেশ বাচাতে হলে রিসাইকেল, রিইউজের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।
প্লাস্টিক দূষণ কমানো সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, সমুদ্র দূষণের জন্য আমরা দায়ী নই। ভারত, নেপাল, চীন থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, এসব নদী প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসে। সব বর্জ্যের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্লাস্টিকের গুরুত্ব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী আয়োডাইজড লবণ প্লাস্টিক ছাড়া প্যাকেজিং করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ভোজ্য তেলের সঙ্গে ভিটামিন এ যুক্ত করতে চায়, যা প্লাস্টিক কন্টেইনার ছাড়া সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। এ ছাড়া গাছের চারা, টেক্সটাইল ও ঝুট প্যাকেজিংসহ নানা কাজে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দরকার।
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের এ প্রেষ্ঠার ফলে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ আইনের কারণে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এর কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সামিম আহমেদ বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে, যার সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান। এ খাতের সঙ্গে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর এ খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, এর আগে যখন প্লাস্টিক বন্ধ হলো তখন এ খাতের অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গিয়েছিল। ২০০২ সালে পাটকে উৎসাহিত করতে শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হলো। কিন্তু দেখা গেল আদমজী মিলস বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলি বিকল্প এলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
ইএসএস/আরএইচ