ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তারুণ্যের উচ্চারণ বাস্তবায়ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তারুণ্যের উচ্চারণ বাস্তবায়ন ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: নতুন আকাঙ্ক্ষা থেকে সরকারের পরিবর্তন ঘটানো হলেও তরুণদের সে আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে না বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণরা। তারা বলেছেন, এ সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তারুণ্যের উচ্চারণের বাস্তবায়ন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট রিফর্ম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-৩০: তরুণ নেতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।

বক্তারা বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার পুরোনো ধাঁচের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, তরুণদের আকাঙ্ক্ষা থেকে একটি সরকারের পরিবর্তন হয়েছে; গঠিত হয়েছে এই নতুন সরকার।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন,  আমরা নিশ্চয়ই একটি স্বপ্ন থেকে আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের ফসল যে সরকার সেই সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তারুণ্যের উচ্চারণের বাস্তবায়ন। কিন্তু সরকারের মধ্যে সেই ব্যবস্থা দেখছি না, সচিবরা কথা বলে চলে যাবেন, আর তরুণরা কথা বলতে গেলেই সময় থাকে না। এটা সেই পুরাতন ব্যবস্থা, যেখানে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা শোনা হতো না।

তিনি বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে রাজস্ব দিতে হবে। এজন্য এমন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব জমা হবে, করফাঁকি দেওয়ার কোনো পথ থাকবে না। রাজস্ব আদায়ের সঠিক পথ-নকশার ভিত্তিতে বাজেট প্রস্তাব করতে হবে। রাজস্ব আদায় না হলে বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায় নিতে হবে।

রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেই রাজস্ব আহরণ কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক উল্লেখ করে ফয়সাল আহমেদ বলেন, যে প্রতিষ্ঠান নিজে সরকারকে কর দেয় না সেই প্রতিষ্ঠানকে কর আদায় করার জন্য আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাড়া করা হয়েছে। কর আদায়ের এই আত্মঘাতী পথ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অদিতি বলেন, ঘাটতি বাজেট হওয়া চলবে না। রাজস্ব আদায় নেই কিন্তু বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন করতে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে বা ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। ঘাটতি বাজেট করে মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে না।

তিনি বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে হবে। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে এনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে জোর দেন এই শিক্ষার্থী।

মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারুণ্য আন্দোলন করেছে, সেটা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সুদ হার বাড়িয়ে চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ব্যয় কমানো হয়েছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি এক অংকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।  

মূল্যস্ফীতির কারণ ঘাটতি বাজেট, এজন্য ঘাটতি বাজেট থেকে সরে আসতে হবে, শিক্ষার্থীদের এমন দাবি নাকচ করে অর্থ সচিব বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই ঘাটতি ছাড়া বাজেট করা হয় না, বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে অর্থ নিয়ে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করে  থাকি।  

যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্র তরুণদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুধু তরুণরা থাকবেন, এ ব্যবস্থা টেকসই হবে না। বৈষম্য নিরসনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।  

তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে ‍পরিকল্পনায়। সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা গেলে তরুণদের শক্তিকে কাজে লাগানো যায়। সরকারের সংগৃহীত রাজস্বের ৭০-৮০ শতাংশ চলে যায় বেতন-ভাতায়। তরুণদের যে চাহিদা তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে আহত তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করা হবে।

অনুষ্ঠানে দুটি কী-নোট উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি ও বিশ্বব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্পেশালিস্ট সুরাইয়ার জাহান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।