ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোংলা বন্দরের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
মোংলা বন্দরের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন শুরু

বাগেরহাট: বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দরের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন শুরু হয়েছে।  

রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরের সামনে থেকে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শোভাযাত্রাটি বন্দর জেটির প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

পরে বন্দর জেটির স্টাফিং অ্যান্ড আনস্টাফিং শেডে আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিদের নিয়ে যোগদান করেন। এদিন বন্দরে সেরা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক, বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিংসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হবে। এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেছেন। দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মোংলা সমুদ্র বন্দর
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনার চালনা এলাকায় এ বন্দর স্থাপিত হয়। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পরে ভৌগোলিক কারণে ১৯৫৩ সালে কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয় বাগেরহাটের মোংলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘দ্য সিটি অব লিয়ন্স’ সুন্দরবনের পশুর নদীর জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করে বন্দরের কার্যক্রম সূচনা করে।

১৯৭৭ সালে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে এটি একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। পরে ১৯৮৭ সালে নামকরণ করা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’। প্রতিষ্ঠার পর নৌপথের নাব্যতা সংকট অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। ১৯৮০ সালের পর থেকে দীর্ঘমেয়াদি ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে বন্দরটির কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা হয়।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি সব জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজিয়ে দিনটি উদযাপন শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রোববার সকালে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সেরা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক, বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিংসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।  

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোংলা বন্দর অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে একাধিক মেগা প্রকল্প। পশুর চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বন্দরের জেটি, মুরিং বয়া ও অ্যাঙ্কোরেজে একসঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙরের সুযোগ রয়েছে। বন্দর চ্যানেলে নেভিগেশন সুবিধার জন্য ৬৯টি বয়া স্থাপন করা হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং, রেফার প্লাগ পয়েন্ট, কার পার্কিং ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন বন্দরের সক্ষমতাকে বহুগুণ বেড়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন ২.৩০ শতাংশ, কার্গো পরিবহন ৯.৭২ শতাংশ ও কনটেইনার পরিবহন ১৬.৭৮ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া গাড়ি আমদানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো ও ৪ লাখ টিইইউজ (কনটেইনার) হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর বর্তমানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয় বরং আঞ্চলিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রীয় হাব হয়ে উঠছে। পদ্মা সেতুর সংযোগ ও উন্নত অবকাঠামো এ বন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বন্দরের বর্তমান অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত করছে।

বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দরের কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। মোংলা বন্দরকে আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য আমরা নানা পরিকল্পনা করছি। আশা করি, মোংলা বন্দর এ অঞ্চলের আমদানি-রপ্তানি ও উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।