ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সম্পদ অর্জনকারীদের দ্বারা ব্যবসায়ীরা অপদস্ত হন: আবদুল আউয়াল মিন্টু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
সম্পদ অর্জনকারীদের দ্বারা ব্যবসায়ীরা অপদস্ত হন: আবদুল আউয়াল মিন্টু দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘বিজয় দিবস: নতুন প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠান | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ‘ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করেন না বরং রাজনীতিকরাই ব্যবসা করেন। যারা রাজনীতি করে সম্পদ অর্জন করেন; বাংলাদেশে এখন বাস্তবতা হয়ে গেছে, যারা সম্পদ সৃষ্টি করেন তারা সম্পদ অর্জনকারীদের দ্বারা অপদস্ত হন’—এমন মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘বিজয় দিবস: নতুন প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় রাজনীতি করেন—অন্য এক আলোচকের এমন বক্তব্যের জবাবে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কেউ কেউ বলে ব্যবসায়ীদের সংজ্ঞায়িত করে অতিমাত্রায় মুনাফাখোর, লোভী ইত্যাদি বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, যারা এটা বলেন তারা সম্পদ সৃষ্টি করেন না। ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করেন না বরং রাজনীতিকরাই ব্যবসা করেন। এখন যারা রাজনীতি করে সম্পদ অর্জন করেন; বাংলাদেশে এখন বাস্তবতা হয়ে গেছে, যারা সম্পদ সৃষ্টি করেন তারা সম্পদ অর্জনকারীদের দ্বারা অপদস্ত হন।

‘আজকে যে প্রত্যাশা করি, স্বাধীনতার পূর্বে একই প্রত্যাশা ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে চেয়েছিলাম, রাজনৈতিক অধিকার চেয়েছিলাম, সামাজিক অগ্রগতি চেয়েছিলাম, সাফল্য চেয়েছিলাম এবং শেষে একটি বৈষম্যহীন সমাজ চেয়েছিলাম। আমরা এখনো সেই একই প্রত্যাশ করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রত্যাশাটা পূরণ করবে কে!



আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, আমি চাই সামাজিক নিরাপত্তা, জানমালের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক।  যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি না হবে, ততদিন আমরা যে প্রত্যাশা করি না কেন, তা কোনদিনই পূরণ হবে না।

গণতান্ত্রিক সমাজ মানুষের মর্যাদা দেয় উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, গত ১৫ বছর আমাদের মর্যাদা ছিল না। আমরা চাই সাংবিধানকি অধিকারগুলো সংরক্ষিত ধাকুক, আমরা চাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অটুট থাকুক, দেশে আইনের শাসন থাকুক এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক।

বিনিয়োগের জন্য জন্য স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রয়োজন উল্লেখ করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। এসব তরুণের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি বিনিয়োগের ব্যবস্থা না করতে পারি। বিনিয়োগ ছাড়া অন্য কোনো পথে কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে হবে।

তিনি বলেন,  যেকোনো রাজনৈতিক দল মানেই যত ধরণের কৌশল আছে, সেগুলো প্রয়োগ করতে চায়, এটা চিরচারিত সত্যি। তাহলে একমাত্র পদ্ধতি হলো, আগে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করতে হবে।



আমরা আইনের শাসনের রাষ্ট্র চাই, আইনের দ্বারা শাসিত কোনো রাষ্ট্র চাই না। আমরা কুশাসনের পরিবর্তে সুশাসন চাই, আমরা বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা চাই। আবার বিচারকরা যদি দলদাস মানসম্পন্ন হয়, তাহলে কোনদিনই ওই বিচারকের দ্বারা ন্যায়বিচার পাব না, বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।

সুশীল সমাজকে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন,  আইনজীবী, শিক্ষকরা যেন জাতিকে বিভক্ত না করেন। আমরা চাই, তারা একতাবদ্ধ থাকুক, যেটা ন্যায়, যেটা সত্য, সেই কথা বলুক। তারা যেন কোনো দলের পক্ষপাতিত্ব না করেন।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সম্পদ বণ্টন নিয়ে কথা উঠেছে। একমাত্র  জনগণের দ্বারা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারই সম্পদ বণ্টনে সঠিক ভূমিকা  পালন করে। ১৫ বছর সম্পদ বণ্টন নিয়ে কথা উঠেছে। কারণ ওই সময়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার দায়িত্বে আসেনি। ওই সময় গণতান্ত্রিক সমাজ ছিল না। যখনই মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকার অনুপস্থিত  থাকে তখনই সম্পদ বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় গোলটেবিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গণি চৌধুরী। এতে রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিনীতিবিদ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।