ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অবরোধের প্রভাব

সবজির মূল্য হ্রাসে দিশেহারা কৃষক

রনবীর ঘোষ কিংকর, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
সবজির মূল্য হ্রাসে দিশেহারা কৃষক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চান্দিনা (কুমিল্লা): কয়েকদিনের টানা অবরোধে প্রভাব পড়ছে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষি খাতে। স্থবির হয়ে পড়ছে বিভিন্ন কাঁচা বাজার।

গত কয়েকদিনে কুমিল্লার বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

তেমনই চিত্র দেখা গেল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বড় কাঁচা বাজার খ্যাত কুমিল্লার নিমসার সবজি বাজারে। নিমসার সবজি বাজারে কাঁচা শাক-সবজির বেচা-কেনায় স্থবিরতা দেখা গেছে। অবরোধে বেচা-কেনা নেই বলে ক্রমশ সবজি মূল্য হ্রাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।

বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি উপেক্ষা করে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল করলেও আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিমসারের পাইকারি কাঁচা বাজারে পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতা আসছে না।

সবজি খ্যাত কুমিল্লার এ বাজারে শতশত কৃষক কাক ডাকা ভোরে শীতকালীন নানা সবজি নিয়ে পসরা সাজিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও সবজি বিক্রি করতে না পারায় বাধ্য হয়েই নামমাত্র টাকায় বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি। ফলে তারা সবজির সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন আড়ৎদার।
 
যে বাজারে শত শত ট্রাক ভিড় করতো, সবজি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার আগেই পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের টানা-টানি শুরু হয়ে যেতো ওই বাজারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও তেমন পাইকারি ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নিমসার সবজি বাজারে শীতের অন্যতম সবজি মুলা নিয়ে আসা বুড়িচং উপজেলার ডুবাইচর গ্রামের কৃষক আলতাফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অন্য দিন মাল লইয়া বাজারে ঢুহনের আগেই পাইকাররা পারাপারি করত, আইজ সহাল থেইক্কা বইয়া রইছি, কেউ জিগায়ও না।

এদিকে অবরোধের কারণে দ্বিগুণ ভাড়ায় দেশের পশ্চিম-উত্তরবঙ্গ থেকে আগাম সবজি এনেও বেকায়দায় পড়েছেন আড়ৎদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

কথা হয় পাইকারি ব্যবসায়ী সাজু মিয়ার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধ ছাড়া এক ট্রাক মাল নিমসার আনতে ট্রাক ভাড়া দিতাম ৬-৭ হাজার ট্যাহ‍া, এহনকার বাজারে অবরোধের মইধ্যে এক ট্রাকের ভাড়া দেওন লাগে ১২/১৩ হাজার ট্যাহা। এক ট্রাক মাল বেচতে এক দিনও লাগতো না, আর এহন তিন দিনেও এক ট্রাক মাল বেচতে পারতাছি না।

আড়ৎদার স্বপন মিয়া জানান, বাজারের অবস্থা ভাল না। সব ধরনের মালের দামই কমে যাচ্ছে। ১৪ থেকে ১৮ টাকা দরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৯ টাকায়, ১৬ থেকে ২২ টাকা দরের টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকায়, ১৬ থেকে ২০ টাকা দরের সিম বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকা কেজি দরে।

তিনি আরো বলেন, আমার আড়তে গত পরশু দিন (রোববার) উত্তর বঙ্গ থেকে এক ট্রাক বেগুন কিনে এনেছি, আজ তিন দিন হলো এখনও বিক্রি করে শেষ করতে পারি নাই। প্রতিদিন আমাদের যে টাকা আয় হতো তার তিন ভাগের এক ভাগও পাচ্ছি না।

মূলত নাশকতার ভয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে না। খুচরা বিক্রেতারাই বাজারে আসছে বলে সবজির মূল্য হ্রাস পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেচা-কেনা না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে শতাধিক শ্রমিক। আড়ৎদার তাদের দোকানে বসে ঝিমাচ্ছে। কোমরে গামছা, মাথায় কাপড় বেঁধে ও হাতে লোহার এঙ্গেল নিয়ে ঘাম ঝড়ানো শতশত দিন মজুর কাজ না থাকায় প্রচণ্ড শীতে একটু তাপের আশায় কেউ রোদে দাঁড়িয়ে কিংবা কেউ চা দোকানের চুলার আগুনের পাশে বসে আছে। আবার কেউ চা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে না দেওয়া, নির্বাচনের সংলাপ ও সাত দফা দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট টানা অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধ কর্মসূচির দশম দিন পর্যন্ত (১৪ জানুয়ারি) বিভিন্ন কাঁচা বাজরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের দুই ধারার রাজনীতির কুফলে বলির পাঠা হয়ে গেছে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষক বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

তাই রাজনৈতিক সমন্বয়ে দেশের সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে সব দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধ জানান আড়ৎদার ও কৃষক সমাজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।