ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেটে রাখা হবে মেটলাইফের মুনাফা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
কেটে রাখা হবে মেটলাইফের মুনাফা

ঢাকা: বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই কোটি কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া জীবন বিমা কোম্পানি মেটলাইফের মালিকদের মুনাফার অংশ কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় সলভেন্সি মার্জিন ৩শ’ কোটি টাকা করার উদ্দেশ্যে কোম্পানিটির ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মুনাফা কেটে রাখা হবে।



বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ।

মেটলাইফ বাংলাদেশে জীবন বিমা ব্যবসা করা একমাত্র বিদেশি কোম্পানি। বিমা ব্যবসা করতে বাংলাদেশে এক টাকাও নিয়ে আসেনি কোম্পানিটি। অথচ বছরের পর বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ।

এমনকি মেটলাইফ পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের কোনো মালিকানাও নেই।

বিদেশি এই বিমা কোম্পানিটি আলিকো নামে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে ১৯৫২ সাল থেকে। ২০১০ সালে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটি কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক জীবন বিমা কোম্পানি মেট্রোপলিটন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ। তখন থেকে এর নতুন নামকরণ করা হয় মেটলাইফ আলিকো। পরবর্তীতে এ বছরে শুরু থেকে বাংলাদেশে কোম্পানিটি নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করে মেটলাইফ।

বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছর ৬ মাসের মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনের এ বাধ্যবাধকতা থেকেও মুক্ত মেটলাইফ। অন্য বিমা কোম্পানির মতো মেটলাইফকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ছাড়াই ব্যবসা করে মেটলাইফ বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রথম অবহিত করা হয় ২০১৩ সালে। সেই প্রথম সেই শেষ। এরপর কোম্পানিটিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধ্য করতে আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
২০১৩ সালে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেটলাইফ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কার্যত কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার (প্রায় ৫০০ কোটি টাকা) মুনাফা নিয়ে গেছে।

কোম্পানিটি বাংলাদেশে শুধুই তাদের পণ্য বিপণন করছে। বিমা খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এমনকি কোম্পানিটি বিমা ব্যবসা শুরু করতে বাংলাদেশে এক পয়সাও নিয়ে আসেনি। অথচ কোটি কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করে নিয়ে যাচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আইডআরএ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের মুনাফার অংশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আইডিআরএ’কে চিঠি দিয়েছে মেটলাইফ। প্রতিষ্ঠানটির রিজিওনাল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি পাঠানো হয় গত বছরের ২৫ নভেম্বর। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি আইডিআরএ।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর আইডিআরএ’র কাছে মেটলাইফ ২০১৩ সালের একচ্যুরিয়াল মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিমা আইন ২০১০’র ৮২ ধারা মোতাবেক মেটলাইফের উদ্বৃত্ত অংশে মালিকদের অংশ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে ১২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

এ লভ্যাংশ থেকে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর ২৩৪ ধারার উপধারা ১(খ) তে নির্দেশিত তহবিলে রেখে, বাকি ১১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয় চিঠিতে। তবে মালিকদের ২০১৪ সালের মুনাফার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য জানায়নি মেটলাইফ।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মেটলাইফের মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হবে না। প্রতিষ্ঠানটিকে সলভেন্সি মার্জিন হিসেবে ৩শ’ কোটি টাকা রাখতে হবে। এ জন্যই ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মুনাফার অংশ কেটে রাখা হবে।

তিনি বলেন, জীবন বিমার গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় সলভেন্সি মার্জিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিমা কোম্পানি সলভেন্সি মার্জিন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে তার নিবন্ধন সনদ বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে আইডিআরএ’র।

মেটলাইফের রিজিওনাল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মুনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এরপর মুনিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখনো পাইনি। আইডিআরএ সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়া এবং কোনো ধরনের বিনিয়োগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, মেটলাইফ বাংলাদেশে ব্যবসা করে একটি ব্রাঞ্চ (শাখা) হিসেবে। সে কারণে মেটলাইফের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিধান নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এএসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।