ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ফাইভ পি’ পলিসিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
‘ফাইভ পি’ পলিসিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি বছরের (২০১৫-১৬) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘ফাইভ পি’ পলিসি (নীতি) বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে।
 
ফাইভ পি পলিসি হল- পলিটিক্যাল গাইডেন্স (রাজনৈতিক অবস্থা), পিপল (করদাতা), পার্টনারশিপ (অংশীদারিত্ব), প্লানিং (পরিকল্পনা) ও পারফরমেন্স (কর্মদক্ষতা)।


 
কর প্রশাসনে সর্বস্তরে এ নীতি বাস্তবায়িত হলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছে এনবিআর’র সংশ্লিষ্ট সূত্র।
 
এ বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, ভ্যাট ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ও শুল্ক ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
 
এনবিআর সূত্র জানায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায় ধরে নির্দেশনা রাজস্ব আহরণে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। স্থিতিশীলতার মধ্যে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন-ব্যর্থতার ক্ষেত্রে পুরস্কার-শাস্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে মো. নজিবুর রহমান যোগদানের পর লক্ষ্যমাত্রায় ‘পুরস্কার-শাস্তির’ ঘোষণা দেন তিনি। এর মধ্যেই গত কয়েক মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বদলি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী কর্মকর্তাদের পুরস্কার হিসেবে ভালো জায়গায় পদায়নও করা হয়েছে।
 
সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশল হিসেবে বোর্ড করদাতাদের (পিপল) ভীতি দূর কর করতে চলতি বছর ‘রেভিনিউ ডায়ালগ বা রাজস্ব সংলাপের’ আয়োজন করেছে। এর মাধ্যমে করদাতারা স্বেচ্ছায় কর দিতে আগ্রহী হবেন।
 
সূত্র জানায়, দেশের সব জেলায় এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১ আগস্ট সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের উদ্যোগে এ সংলাপ শুরু হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান এর উদ্বোধন করেন। সম্প্রতি যশোর (বেনাপোল কাস্টমস) ও খুলনায়ও এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপে রাজস্ব কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর এ সংলাপ করতে এনবিআর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসন নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের ফলে কর মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে এনবিআর ও করদাতাদের দূরত্ব কমে আসছে। গতি পাচ্ছে মাঠ প্রশাসন ও বাড়ছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ।
 
সূত্র আরো জানায়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশ পূরণ করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দূরত্ব কমিয়ে অংশীদারিত্বের (পার্টনারশিপ) মাধ্যমে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। দূরত্ব কমলে রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করে কর্মকর্তারা।

এজন্য অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এনবিআর। বাজেটের পর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কেন্দ্র ও মাঠ প্রশাসনে ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকও অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট এনবিআর’র সঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র বৈঠক হয়েছে। এতে সংগঠনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এনবিআর’র সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দূরত্ব কমে আসায় ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
 
সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌশলী পরিকল্পনা (প্লানিং) নিয়েছে এনবিআর। এজন্য বাজেট ঘোষণার পরপরই বার্ষিক কর্মম্পাদন চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তির আলোকে প্রতি প্রান্তিকে সমান রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরে তা অর্জনে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা চলছে বকেয়া রাজস্ব আদায়, করের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করা ও জরিপ।
 
সূত্র জানায়, কর্মকর্তার কর্মদক্ষতার (পারফরমেন্স) ওপর নির্ভর করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে এনবিআর প্রথমবারের মতো চালু করেছে ‘রিপোর্ট কার্ড’। কার্ডে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায়, কাজের অগ্রগতি, করদাতাদের সঙ্গে আচরণ ও স্বচ্ছতার বিষয় উল্লেখ থাকবে। প্রতি মাসে সব রাজস্ব কর্মকর্তাকে এ কার্ড জমা দিতে হবে। এর ফলে সৎ, কর্মঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের গতি আসছে। রিপোর্ট কার্ড অনুযায়ী কর্মকর্তাদের পুরস্কার ও ভালো জায়গায় পদায়নে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
 
সূত্র জানায়, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৯২৮ কোটি ১০ লাখ টাকার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। তবে বড় কয়েকটি সংস্থা থেকে রাজস্ব আদায় হলে ঘাটতি থাকবে না। মাঠ প্রশাসনের যেসব অফিস লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে এনবিআর।
 
একজন যুগ্ম কর কমিশনার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফাইভ পি’ পলিসির ফলে কর অঞ্চল ও কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ কর্মচাঞ্চল্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
 
ফাইভ পি পলিসির মাধ্যমে এনবিআর’র রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
 
তিনি বলেন, ফাইভ পি অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন। এর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।