ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে ৪ মাস পাথর উৎপাদন বন্ধ

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে ৪ মাস পাথর উৎপাদন বন্ধ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): মাইনিং ইক্যুইপমেন্টের (পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ) অভাবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে প্রায় চার মাস ধরে পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

খনি কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত প্রি-শিফমেন্ট ইন্সপেকশন এজেন্ট সিঙ্গাপুরের জিওকেম কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি ২১ ও ২৫ জানুয়ারি রাশিয়া ও চীনে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে মালামাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন।

জিওকেম কোম্পানির ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেলে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে যন্ত্রপাতি আসা শুরু হবে। এরপর তা খনি ভূ-গর্ভে বসিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে পুনরায় পাথর উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট সময়মত বিদেশ থেকে আমদানি না করায় যন্ত্রপাতির অভাবে খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ১ আগস্ট প্রতিদিন তিন শিফটের জায়গায় দু’টি শিফট বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি।

এদিকে, পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জিটিসিতে কর্মরত ৭০ জন বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

এছাড়া জিটিসির অধীনে খনিতে কর্মরত প্রায় এক হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়। এদের অধিকাংশই খনি পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা।   চার থেকে ছয় মাস ধরে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব শ্রমিকের পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব, অনটন।

অপরদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় পাথর বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খনি কর্তৃপক্ষের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাছাড়া, খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে জিটিসির মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খনি ভূ-গর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়ন ও উৎপাদন সহায়ক অতি প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর অগ্রণী ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়। প্রথম অবস্থায় প্রায় ৯৫ কোটি টাকার ৩৪টি প্রোফর্মায় অন্তর্ভুক্ত শতাধিক আইটেমের যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। এলসি খোলার পরপরই খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার জিটিসি এসব মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদনকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের জন্য অর্ডার দেয়।

সূত্রমতে, রাশিয়া ও চীন থেকে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট আমদানি করা হচ্ছে। ইক্যুইপমেন্ট  তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত প্রি-শিফমেন্ট ইন্সপেকশন এজেন্ট সিঙ্গাপুরের জিওকেম কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি আগামী ২১ ও ২৫ জানুয়ারি রাশিয়া ও চীনে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে তা পরিদর্শন করবেন।

প্রি-শিফমেন্ট ইন্সপেকশন এজেন্ট জিওকেম কোম্পানির ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ইক্যুইপমেন্ট জাহাজিকরণ করা হবে। সমুদ্র পথে তা দেশে নিয়ে আসতে সময় লাগবে ১০/১২ দিন। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে জাহাজ থেকে ইক্যুইপমেন্ট খালাস করে মধ্যপাড়ায় নিয়ে আসতে আরো ৭/১০ দিন সময় লাগবে। এরপর খনি ভূ-গর্ভে ইক্যুইপমেন্ট নামিয়ে বিভিন্ন স্থানে সেট করে স্টোপ উন্নয়ন করার পর পাথর উৎপাদনে যেতে হবে। সব মিলে আরও মাস দেড়েক সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাবেদ সিদ্দিকী বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, উৎপাদনকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানে অনেক যন্ত্রপাতি তৈরি হয়ে গেছে। কিছু যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগির বিদেশ থেকে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট খনিতে চলে আসবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উৎপাদন বন্ধ থাকায় তাদের মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম-অপারেশন) মীর আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আসা শুরু হবে। যন্ত্রপাতি এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাথর উৎপাদন শুরু করা হবে।

খনির মহাব্যবস্থাপক (জিএম-প্রশাসন ও বিপনন) নেয়াজুর রহমান জানান, খনি ইয়ার্ডে বর্তমানে ৫-২০ মি.মি সাইজের ২৫-৩০ হাজার টন পাথর মজুদ রয়েছে। এছাড়া ডাস্ট (পাথরের গুড়া) রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। অন্যান্য সাইজের পাথর মজুদ না থাকায় বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দু’একটি সিমেন্ট কারখানা কিছু পরিমাণ ডাস্ট নিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ (৯.২ মিলিয়ন টন) টন পাথর উত্তোলন করে দিবে। জিটিসি ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পাথর উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদন শুরুর ছয় মাসের মধ্যে খনিতে তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে আসছিল। খনি ভূগর্ভে নতুন স্টোপ উন্নয়নের জন্য উৎপাদন সহায়ক প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে আসছিল জিটিসি।

কিন্তু খনি থেকে উৎপাদিত পাথর আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় অর্থ সংকটে সময় মত ইক্যুইপমেন্ট আমদানি করতে পারেনি খনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা আগস্ট মাসে মধ্যপাড়া খনিকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ (ঋণ হিসেবে) দেয়। পেট্রোবাংলার ঋণ পেয়ে খনি কর্তৃপক্ষ ইক্যুইপমেন্ট আমদানির উদ্যোগ নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।