ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নীলফামারীতে শীতের দাপট

চাতাল বন্ধে বেকার ৩০ হাজার শ্রমিক

নুর আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
চাতাল বন্ধে বেকার ৩০ হাজার শ্রমিক ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

নীলফামারী: মাঘের কনকনে শীত ও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নীলফামারীর অধিকাংশ চাল মিল ও চাতাল। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন জেলার অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিক।



হঠাৎ করে উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন এসব শ্রমিকেরা। দিন এনে দিন খাওয়া এসব শ্রমিকদের পরিবারে বিরাজ করছে দুবির্ষহ অবস্থা।
 
এদিকে, শীতের প্রকোপের কারণে চাল মিল ও চাতাল বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে চাল সংগ্রহ কার্যক্রমেও। জেলায় সংগ্রহ অভিযানের এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও খাদ্য গুদামগুলোতে চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৬ শতাংশ। তবে খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন শীতের প্রভাবে সংগ্রহে ভাটা পড়লেও যথাসময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। ‍

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার সাতটি খাদ্য গুদামে চলতি আমন মৌসুমে ৪ ‍হাজার ৩১৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন জেলার ৫৮৩টি মিল-চাতালের মালিক। এরমধ্যে ১৩টি অটোরাইস মিলও রয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নীলফামারী সদরে ১৪২৩, সৈয়দপুরে ৪২৭, ডোমারে ৮৪১, জলঢাকায় ৮২৯, ডিমলায় ৬৬৮ এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১২৯মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৯০ দিনের এ চাল সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১১০৫ মেট্রিক টন চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৬ শতাংশ।

জেলার বিভিন্ন চাল মিল ও চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাঁড় কাপানো শীতের কারণে তাদের এমন দশা হয়েছে। গত প্রায় এক মাস ধরে সূর্য্যের মুখ ঠিকমতো দেখা যায়নি। রোদ না থাকায় ধান শুকিয়ে চাল করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন কাজ।
 
কিশোরগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর হাসকিং মিলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, গত ২০/২৫ দিন থেকে রোদের প্রখরতা ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে চাতাল বন্ধ রয়েছে। তার মিল ও চাতালে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু ধান শুকানো বন্ধ থাকায় এখন বসে সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।
 
জেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জানান, চাতালের আকার ভেদে ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেন। শীতের তীব্রতার কারণে কিছুদিন ধরে অধিকাংশ চাতালে ধান শুকানো বন্ধ রয়েছে।

তিনি জানান, গোটা জেলায় কমপক্ষে ৩০ হাজার চাতাল শ্রমিক রয়েছেন। তারা দৈনিক গড়ে ১৫০ টাকা হাজিরা পান। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় তারা বসে আছেন। শীতের প্রকোপ কমলে আবারো কাজ শুরু হবে। তবে সংগ্রহ অভিযানে বিঘ্ন ঘটবে না বলে তিনি মনে করেন।

নীলফামারী শহরের গাছবাড়ি এলাকার চাতাল শ্রমিক আছিয়া খাতুন জানান, গত ১৫/২০ দিন থেকে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না চাতালে। হাজিরা পেতেন ১০০ টাকা করে। কিন্তু চাতাল বন্ধ থাকায় চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছে তার। ধার-দেনা আর দোকানে বাকি রেখে সংসার চালাতে হচ্ছে।

শীতের প্রকোপ চাল সংগ্রহ অভিযানে প্রভাব ফেলছে জানিয়ে নীলফামারী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঘের শীতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে মিল-চাতালে। এতে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে সংগ্রহ অভিযানে।

তবে এ সমস্যা থাকলেও চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হবে না আশা করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন জানান, সময়সীমা আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত রয়েছে। চুক্তিবদ্ধ মিলাররা যথাসময়ে গুদামে চাল দিতে পারবেন। তবে শীতের প্রকোপের কারণে নির্দিষ্ট আর্দ্রতা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।