ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবজি চাষ

ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহারে জুয়েলের ভাগ্যবদল

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহারে জুয়েলের ভাগ্যবদল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহার করে সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন ভোলা সদর উপজেলার মুন্সির চর গ্রামের সবজি চাষি মো. জুয়েল (২৫)। সবজি চাষে সফলতা অর্জন করে তিনি এখন সাবলম্বী।


 
গত বছরের মতো এ বছরও তিনি করলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এতে একদিকে যেমন তার বেকারত্ব দূর হয়েছে তেমনি অন্যদিকে সবজি চাষে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার এ সফলতা দেখে এখন গ্রামের অনেকেই বিষমুক্ত সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার নতুন করে সবজি খেত তৈরির স্বপ্নও দেখছেন।

ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মুন্সির চর গ্রামে গিয়ে কথা হয় সফল সবজি চাষি জুয়েলের সঙ্গে।

তিনি বলেন, দরিদ্রতার কারণে এসএসসির পর আর পড়ালেখা হয়নি। অন্য কাজে হাত দিয়েও সফল হতে পারিনি। পরে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিন বছর আগে করলা চাষ শুরু করি। এতেই আমার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে।

এ বছর জুয়েল ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ১০০ শতাংশ জমিতে করলার চাষ করেছেন। মৌসুমের শুরুতেই ৩০ হাজার টাকার করলা বিক্রি হয়েছে। গত দুই বছর একইভাবে ২০ ও ৪৫ শতাংশ জমিতে সবজির আবাদ করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করেন তিনি।

সবজি চাষি জুয়েল বলেন, এ মৌসুমে খেতে কোনো পোকার আক্রমণ নেই, নেই কোনো রোগ-বালাই। এরপরও যদি কোনো পোকা থেকে থাকে সে কারণে পোকা দমনে ফেরমোন ফাঁদ ব্যবহার করেছি। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিনামূল্যে পোকা দমনকারী এ ফাঁদ দেওয়া হয়।

এ মৌসুমে বাজারে সবজির দামও অনেক ভালো। বর্তমান বাজার দর ৩০ থেকে ৩৫টাকা। ইতোমধ্যেই খেতের উৎপাদিত করলা ভোলা ও বরিশালের পাইকারি এবং খুচরা বাজারে বিক্রি শুরু করেছি।

জুয়েলের বাবা আবুল কাসেম বলেন, ছোট বেলা থেকেই ধান চাষ করে আসছি, কখনও লোকসান আবার কখনও ফলনের বিপর্যয়। তেমন লাভের মুখ দেখিনি। তবে আমার ছেলে সবজি চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে।

একই এলাকার কৃষক কাঞ্চন মাতাব্বর বলেন, ১৬০ শতাংশ জমিতে ধানের আবাদ করেছি কিন্তু বাজার দাম ভালো পাচ্ছিনা। চিন্তা করছি এবার সবজির আবাদ করবো।

স্থানীয় মাঈনুল হোসেন বলেন, জুয়েল এলাকায় সবজি চাষ করে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাকে দেখে এখন এলাকার অনেকেই সবজি চাষ শুরু করে দিয়েছে। গ্রামে দুই শতাধিক চাষি থাকলেও বর্তমানে ২০/২৫ জন শুধু সবজি চাষ করছেন। এছাড়াও সবজি চাষের জন্য মুন্সির চরের মাটি ও আবহাওয়া অনেক ভালো তাই সবজি চাষ করছেন যুবকরা।

স্থানীয় চাষি কামাল হোসেন বলেন, বিগত দিনে সবজি চাষে কেউ উৎসাহিত ছিলনা, কিন্তু বর্তমানে অনেকেই সবজি চাষে নেমে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সির চর গ্রামে এখন সবজির সমারোহ। শশা, ক্ষিরা, ফুলকপি, বাঁধা কপি, ঢেঁড়স চাষ হচ্ছে অধিকাংশ জমিতে। বেকার যুবক জুয়েলের সফলতা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম জুড়ে। তার মত সবজি চাষের স্বপ্ন দেখছেন অন্যরাও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় পাঁচ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে লাউ, ফুল কপি, টমোটো, মুলা ও গাজরসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর।

কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ পেলে সবজি চাষে আরো বেশি প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন চাষিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।