ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
চা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: রংপুর বিভাগে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার পাশাপাশি চা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট জেলা। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে চা বাগান।

এসব বাগানে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চা পাতা উৎপন্ন হচ্ছে।  
 
চা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্থানীয় চা বাগান মালিকের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সোমা অ্যান্ড সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অনুকূল পরিবেশ ও ব্যাপক সম্ভাবনার কারণে চা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন এ জেলার চাষিরা।
 
জেলায় সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চায়ের চাষ হয় হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই এলাকায়। ওই গ্রামের ফেরদৌসের স্ত্রী শাহানারা বেগম সোমা জীবিকার সন্ধানে একটি এনজিও প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন পঞ্চগড় জেলার চা বাগান এলাকায়। সেখানকার চা বাগান মালিকদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখে শখ করে চা গাছের চারা নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করেন অনেকটাই পরীক্ষামূলকভাবে।
সেই চায়ের গাছটি দিনে দিনে বড় হলে সোমার চা শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্নটাও বড় হতে থাকে। আস্তে আস্তে তিনি নিজ বাড়ির উঠানে গড়ে তোলেন চায়ের বাগান। এনজিও’র চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে নিজের চা বাগানের পরিচর্যায় মনোযোগ দেন সোমা বেগম ও তার স্বামী ফেরদৌস আলম।
 
এ অঞ্চলের চা বাগানের স্বপ্নদ্রষ্টা শাহানা বেগম সোমা বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দিকে অনেকটা শখ করেই চা বাগান শুরু করেন। সেই শখই একদিন চা শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখায়। সেই স্বপ্নকে লালন করেই সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি।  
চা শিল্প পুরোপুরি বিকাশ ঘটলে দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে লালমনিরহাটের চা। একইসঙ্গে জেলাবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।
 
এ দম্পত্তির একক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠা চা বাগান দেখে এ অঞ্চলের অনেকেই চা বাগান করায় আগ্রহী হয়ে উঠে। এসব অাগ্রহী চাষিদের সুবিধার জন্য এ দম্পত্তির পরবর্তীতে গড়ে তোলেন দু’টি চা গাছ নার্সারি। সেখান থেকে সুলভ মূল্যে চারা সংগ্রহ করে এখন অনেক কৃষকই গড়ে তুলেছেন চা বাগান। নতুন আরও অনেকেই এগিয়ে আসছেন চা বাগান করার পরিকল্পনা নিয়ে।
হাতীবান্ধা উপজেলার পারুলিয়ার চা বাগান মালিক বদিউজ্জামান ভেলু বাংলানিউজকে বলেন, চা বাগানে একবার চারা রোপন করে পরিচর্যা করলেই কম খরচে অনেক মুনাফা পাওয়া যায়। তাই তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে দুই একর জমিতে চা বাগান করেছি।  
 
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা জমগ্রামের চাষি তাজুল ইসলাম, দহগ্রামের চাষি বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বল্প পরিশ্রমে ও কম খরচে অধিক মুনাফা পেতে চা চাষের বিকল্প নেই। বর্তমানে নিজ জেলায় টি প্রসেসিং কোম্পানি হওয়ায় বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই। তাই দিন দিন এ জেলায় চা চাষির সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করেন তারা।  
 
চা শিল্পের প্রসারে লালমনিরহাটে একটি চা বোর্ড গঠনের দাবি জানান এ দুই চা চাষি।  
বর্তমানে সীমান্তবর্তী এ জেলার ৫টি উপজেলায় ২০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে চা বাগান। নতুন করে ৫০০ একর জমিতে চা বাগান করার প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানান সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম।  
 
ফেরদৌস আলম বাংলানিউজকে জানান, এ অঞ্চলে এক বছরে এক একর জমিতে চা উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৭ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী বর্তমানে ২০০ একর জমিতে মোট ১৪০০ মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হচ্ছে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায়। আর এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৭৫ জন চা চাষি।  
তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে এ অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত চা পাতা বিক্রি হতো পঞ্চগড় জেলায়। দূরে নিয়ে বিক্রি করতে চাষিদের পরিবহন খরচ মেটানোর পর তেমন একটা মুনাফা হতো না। তাই তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে যৌথ উদ্যোগে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন সোমা অ্যান্ড সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড নামে চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে।
 
বর্তমানে এ অঞ্চলের চাষিরা প্রতি কেজি ১৮ টাকা দরে সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেডে কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করছেন। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের জটিলতার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় জেনারেটর দিয়েই চালু করা হয়েছে কারখানাটি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফেরদৌস আলম।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬       
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।