ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মীনাবাজারে অনিয়ম: ধানমণ্ডি

লোকসানে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক আউটলেট

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
লোকসানে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক আউটলেট ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ভ্রাম্যমান আদালতের চলমান অভিযানে বারবার জেল জরিমানার শিকার হয়েও পচা ও নিম্ন মানের পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছে দেশের অন্যতম অভিজাত চেইনশপ মীনাবাজার। নিজেদের না শুধরে নিম্ন মানের পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না তারা।

ফলে লোকসানের মুখে বন্ধ করতে হচ্ছে মীনাবাজারের একের পর এক আউটলেট।

লোভনীয় ছাড় আর নানা বিজ্ঞাপণ দিয়েও ক্রেতা টানতে পারছে না এক সময়ের জমজমাট এই চেইনশপটি। রাজধানী ঢাকায় মীনাবাজারের একাধিক আউটলেট ঘুরে এমন দুর্দশার চিত্র নজরে আসে। হতাশ কর্মচারিরাও জানালেন লাভের মুখ দেখতে না পেরে একাধিক আউটলেট বন্ধ করছে কোম্পানিটি। ফলে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন কর্মীরা।

শুধু তাই-ই নয়, মীনাবাজার ঘুরে দেখা যায়, একই ধরনের পণ্য ভিন্ন নামে মোড়কজাত করে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। যা বাজারমূল্যের প্রায় কয়েকগুণ বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক মাসে তিনটি আউটলেট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মীনাবাজার। এর মধ্যে বনানী ১১ নম্বর রোডের মত ব্যস্ত সড়কের একটি আউটলেট।

এই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা থাকলেও শুধু মাত্র নিম্নমানের পণ্য সরবারহ করা ও অতিরিক্ত মুল্য আদায়ের কারণে এক সময় ক্রেতারা মীনাবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে লোকসানের দিকে এগুতে থাকে মীনাবাজারের বনানী আউটলেটটি। যা মাস দুই আগে বন্ধ হয়ে গেছে।
 
রাজধানীর জনবহুল এলাকা শ্যামলীর রিং রোডের মীনা বাজার আউটলেটিও এখন বন্ধ। একই কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিভাগীয় শহর খুলনায় মীনাবাজারের একমাত্র আউটলেটটিও।

মিরপুরের পল্লবী এলাকায় অবস্থিত মীনা বাজারের আউটলেটে সরেজমিনে দেখা যায় ক্রেতাদের বিরক্তি। দুপুর সোয়া ২টার দিকে একজন নারী ক্রেতাকে কাউন্টারে বেশ কিছু পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে দেখা যায়। এসময় আধা কেজি ওজনের এক প্যাকেট মুড়ির মূল্য জানতে চান তিনি। প্যাকেটে তা লেখা ছিল না। বিক্রেতা নারীটি জানালেন ৮২ টাকা।

আধা কেজির মুড়ির মূল্য এতো বেশি কেন জানতে চাইলে ক্রেতাকে বলা হয়, এটা হাতে তৈরি বা অর্গ্যানিক মুড়ি। তাই এর মূল্য বেশি।

ইমাম হাবিব নামে আরেকজন ক্রেতা প্রশ্ন করেন, হাতে ভাজা আধা কেজি মুড়ি বাইরে ৫৫ টাকায় পাওয়া যায়, অথচ মীনাবাজার প্রায় ৩০ টাকা বেশি রাখছে। একই ধরনের পণ্যমূল্যে এত বেশি পার্থক্য থাকবে কেন?

ওই দুজন ক্রেতাই মুড়ি না কিনে ফিরে যান।

ঘণ্টাখানেকের অবস্থানে আউটলেটটিতে কথা হয় আরো ক’জন ক্রেতার সঙ্গে। নাসিমা আক্তার নামে একজন ক্রেতার অভিযোগ, ‘অর্গানিক’ নাম দিয়ে মুরগীর মাংসের দামেও ২০-৩০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

মাংসের শো-কেসে দেখা যায়, দেশী মুরগীর কেজি ৬৭০ টাকা লেখা থাকলেও অর্গ্যানিক মুরগীর মাংসের মূল্য ধরা হয়েছে ৬৯০ টাকা।

এ বিষয়ে মীনাবাজারের এক্সিকিউটিভ সুজন চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘কোম্পানির নিজস্ব খামারে পালিত মুরগীর মাংসকে অর্গানিক মাংস বলছি আমরা। অন্যান্য মুরগী সাধারণ খাবার খেয়ে বড় হয়, আর মীনাবাজারের খামারের মুরগীগুলোকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বড় করা হয়। এটাই মূল পার্থক্য। ’’

তবে উপস্থিত একজন নারী ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘শুধু এটুকু পার্থক্যের জন্য কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা মূল্য বেশি হতে পারে না। এটা অন্যায়। ’’

একদিনের পুরোনো মাংসও টাটকা মাংসের দামে বিক্রি করা হচ্ছে অভিযোগ এনে ওই ক্রেতা বলেন, ‘‘টাটকা মাংস আর বাসি মাংসের মূল্য এক হতে পারে না। এক্ষেত্রেও আমাদের ঠকানো হচ্ছে। ’’

কিছু গুড়া মাছ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পচা অথচ বরফ দিয়ে রাখা এই মাছের মূল্য রাখা হচ্ছে ৪শ ৬৪ টাকা, অথচ বাইরে এর চাইতে টাটকা একই মাছে পাওয়া যাবে কমপক্ষে একশ টাকা কমে। ’’

পল্লবী আউটলেটের একজন বিক্রেতা নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে বলেন(নাম প্রকাশ না করার শর্তে), ‘‘কোম্পানি কেন যে দামে এতো পার্থক্য রাখে জানি না। আমরাও অবাকই হই। ’’

তিনি জানান, লোকসান পড়ে একের পর এক আউটলেট বন্ধ হচ্ছে।

এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ সুজন বলেন, ‘‘আগে ১৯ বা ২০টি আউটলেট থাকলেও বন্ধ হতে হতে এখন ১৬টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি আউটলেট বাড়ানো হতে পারে। ’’

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
জেপি / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।