ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসায় আগোরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন তারিখ বসায় আগোরা! ছবি: হারুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সকাল ১০টা। উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের চেইন সুপারশপ আগোরা আউটলেটে খুব মনোযোগ দিয়ে একটি নুডুলসের প্যাকেট দেখছিলেন এক নারী ক্রেতা।

আগ্রহী হয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখটি দেখছি। অনেক সময় আগোরা কর্তৃপক্ষ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নিজেরাই নতুন তারিখ বসায়। এর প্রমাণ আমি পেয়েছি। তবে অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেনি।

সরেজমিনে ঘণ্টাখানেকের অবস্থানে আউটলেটটিতে বেশ কয়েকজন ক্রেতার মুখেই শোনা গেলো আগোরার বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ।

উত্তরার বাসিন্দা শান্তা কোরেশি বাংলানিউজকে বলেন, মাছ কিনে বাসায় গিয়ে দেখি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
তিনি বলেন, আমরা পণ্যের গায়ে লেখা মূল্য দেখে কিনি। একসঙ্গে অনেক পণ্য কেনায় কোনটার কোন দাম রাখছে সবসময় লক্ষ্য করা হয় না। বাসায় গিয়ে যখন মেলানোর চেষ্টা করি তখন অনকেবারই বেশি মূল্য নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এটা ভুল নয়, প্রতারণা।

সকালে উত্তরার ব্যস্ততম এ আউটলেটটি ঘুরে দেখা যায়, হিমায়িত মাংস বিক্রির দায়ে ধানমন্ডি আউটলেটকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও এ শাখাটিতে দিব্যি হিমায়িত মাংস রাখা হয়েছে। তাও টাটকা মাংসের দামেই। এ মূল্য আবার বাজার মূল্যের চেয়েও বেশি।

দেখা যায়, কেজি প্রতি ৬শ টাকা  মূল্যে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে। হাড় ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫শ ৯৫ টাকা দরে। আর এ সবই বাসি। পাশাপাশি টাটকা মাংসও রাখা আছে।

আগোরার বিরুদ্ধে পচা মাছ বিক্রির অভিযোগও করলেন ক্রেতারা।

উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অন্যতম পুরনো চেইন শপ আগোরা। তাই বিশ্বাস করতাম এরা অন্তত পচা বাসি পণ্য বিক্রি করবে না। প্রায় প্রতিদিনই তাদের বিজ্ঞাপনও দেখি। তবে নিয়মিত পচা মাছ আর নিম্নমানের সবজি কিনে বুঝছি এতো বিজ্ঞপন শুধু ক্রেতাদের মন ভোলানোর জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিত্য বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়েও ক্রেতা টানতে পারছে না আগোরা। একসময় এ চেইন শপের নিয়মিত ক্রেতারাও এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, এক সময়ে কাঁচাবাজারও নিয়মিত আগোরা থেকে করতাম। এখন খুব জরুরি না হলে এখানে খুব বেশি আসা হয় না। পণ্যের মান নিয়ে সন্দেহ তো আছেই। সেই সঙ্গে নির্ধারিত খুচরা মূল্যের উপর নতুন করে মূল্য সাঁটানো থাকে।
এছাড়া আগোরার বিরুদ্ধে ভ্যাটমুক্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট আদায় করার অভিযোগও তোলেন তিনি।

এর আগে প্রসাধনীসহ বিএসটিআইয়ের অননুমোদিত পণ্য রাখার অভিযোগে আগোরার উত্তরা আউটলেটকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তবে নিম্নমানের পণ্য রাখা কিংবা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে আগোরা কর্তৃপক্ষ। ভুল বোঝাবুঝির কারণেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আগোরাকে জরিমানা করছে বলে দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক জানান, নিম্নমানের পণ্য রাখার সুযোগ নেই আগোরাতে। মাংসও দেড়দিনের বেশি রাখা হয় না।
তবে পণ্যের গায়ে লেখা মূল্যে অতিরিক্ত আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে এমন ভুল হয়ে যেতে পারে। হয়তো মূল্য পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু গায়ে বসানো হয়নি। তবে এটা সব সময়কার ভুল নয়।

এছড়া পণ্যের মানের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখার নির্বাহী বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলার অনুমতি আমাদের নেই। কোম্পানির সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় হেড অফিস থেকে। সেখানে যোগাযোগ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
জেপি/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।