ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন পরিচালকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন পরিচালকরা

ঢাকা: দেশের ব্যাংকিং খাতে সংঘটিত ৯০ শতাংশ অপরাধে নিজেদের লোক জড়িত বিশেষ করে এসব অপরাধে পরিচালকদের হাত বেশি। বর্তমানে ব্যাংকের পরিচালকরা একে অপরের ব্যাংক থেকে ভাগাভাগি করে ঋণ নিচ্ছেন।


 
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিআইবিএম’ এ ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আর্থিক অপরাধ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।
 
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এসএ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল আহমেদ চৌধুরী ও সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ফারুক মইনুদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের এমডিদের আগের মত স্বাধীন দেখা যাচ্ছে না। গত ৩০ অক্টোবর ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের দীর্ঘ সময় থাকার দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্যাংক চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি। ) ওই বৈঠকে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এভাবে পরিচালকদের অযৌক্তিক দাবির সঙ্গে আগে কখনও এমডিরা একাত্মতা প্রকাশ করেননি।
 
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এতে করে ব্যাংকের এমডিরা পরিচালকদের লেজুরে পরিণত হয়ে পড়বেন এমন আশংকা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি বড় ব্যাংকও এ ধরণের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়েছে। বিদ্যমান ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালকরা টানা দুই মেয়াদ (৬ বছর) পরিচালক থাকতে পারেন। মাঝখানে বিরতি দিয়ে পরে আবার তারা পরিচালক পদে আসতে পারেন। কিন্তু বিএবি ও এবিবির দাবি, উদ্যোক্তারা আজীবনই ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকবেন, ছয় বছর পরে কেন বিদায় নেবেন।
 
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, দীর্ঘদিন এক পদে থাকলে সেখানে অপরাধের প্রবণতা বাড়ে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের ৯০ শতাংশ টাকা আমানতকারীদের। তাদের আমানতের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ব্যাংক খাতে অপরাধ যেহেতু বেড়েছে তাই প্রত্যেক ব্যাংকে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করতে হবে। এদের কাজ হবে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে পূর্বাভাস দেয়া। এদের পরিচয় সবাই জানার দরকার নেই। বর্ণচোরা হয়ে কাজ করবে।  
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক অপরাধ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলা করে আমাদের এগুতে হচ্ছে। বিশেষ করে মানিলন্ডারিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে।
 
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এ চৌধুরী বলেন, পরিচালকরা বর্তমানে ভাগাভাগি করে ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন। বলে-তুমি আমার ব্যাংক থেকে নাও, আমি তোমার ব্যাংক থেকে নেব। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিনের খেলাপি হওয়া অর্থ ফেরত পেতে মামলা করে। কোর্ট থেকে সে মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে আবার ঋণ নিচ্ছে খেলাপিরা। এ ধরণের ঋণ নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার করে বন্ধ করতে হবে। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট কোনো ব্যাংকে নেই। এটা গঠন করতে হবে।
 
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ আদায় হয়েছে। বাকি টাকার হদিস নেই। এ টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
 
কর্মশালায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আর্থিক অপরাধ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাপত্রটি তৈরি করেছেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব।

বিআইবিএম সদস্য এসকে নাজিবুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জুলকার নাইন ও বিএফআইইউর যুগ্ম পরিচালক কামাল হোসেনের সহায়তা এটি প্রস্তুত করা হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
এসই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।