ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে পৃথিবীকে ভিন্ন বার্তা দিলো ওয়ালটন

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে পৃথিবীকে ভিন্ন বার্তা দিলো ওয়ালটন ছবি: ইমন দেওয়ান-বাংলানিউজ

ঢাকা: বিশ্ব নেতারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ বন্ধে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর। মাস না পেরুতেই তা বন্ধে বিশ্বকে পরিবেশ রক্ষায় পরিবর্তনের বার্তা দিলো দেশের ইলেক্ট্রনিক্স, ইলেক্ট্রিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের জায়ান্ট ওয়ালটন।



‘দেশের পণ্য’- স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ খাতের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষার্থেও অগ্রগামী থাকত চায়। যাতে বিশ্ব তুলনা দিতে পারে ওয়ালটনকে, বাংলাদেশকে। বাংলানিউজের কাছে বেশ বিনীতভাবেই গর্বের এ খবরটি জানাচ্ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম। এ দিয়েই পরিবেশ রক্ষায় যুগান্তকারী অধ্যায়ে পা রাখলো ওয়ালটন।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তির এ গ্যাস দিয়ে তৈরি ফ্রিজ কারখানার একটি ইউনিট উদ্বোধন শেষে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

'সত্যিই, অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের অহংকার এ ওয়ালটন। আজ যে প্রযুক্তির পথচলা শুরু হলো নিঃসন্দেহে তা ঐতিহাসিক। আমরা বিশ্বকে মাথা উঁচু করে দেখাবো। আমরাও পারি'। এমন প্রশংসাই ঝরছিলো উপমন্ত্রীর কণ্ঠে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে বিশ্বের প্রায় ২০০ রাষ্ট্র মিলিত হয়ে সবাই একমত হলো। সবার আগে বাঁচাতে হবে এ পৃথিবী। সিদ্ধান্ত এলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস এইচএফসি (হাইড্রোফ্লুরোকার্বন) বন্ধের। এইচএফসি গ্যাস প্রধানত কাজ করে এসি ও ফ্রিজের শীতক হিসেবে। যা ফ্রিজের কমপ্রেসারের মাধ্যমে ঠাণ্ডা করে। পৃথিবীর বয়স বাড়ছে। পরিবেশ রক্ষায় আসছে সচেতনতা।

ফ্রিজ-এসির শীতক গ্যাস হিসেবে আগে ব্যবহৃত হতো সিএফসি গ্যাস। ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে স্বাক্ষরিত চুক্তির পর সেই গ্যাস ব্যবহার বাতিল হয়ে যায়। পরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয় এইচএফসি গ্যাসের।  তারপর ভাবনা শুরু এইচএফসি গ্যাসের ক্ষতিকারণ বিষয় নিয়ে।

কিগালি সম্মেলনে মন্ট্রিল চুক্তিই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এনে বিশ্বকে বার্তা দেয়া হয় এইচএফসি গ্যাস ব্যবহার বন্ধের। তাই বলে এতো অগ্রগামী। এত সুদূরপ্রসারী চিন্তা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তো বাংলাদেশে এটা ভাবাই যায়না?

‘এটাই ওয়ালটন। আমাদের অঙ্গীকার। সহাস্যে উত্তরটা ঠোঁটের কোণায় তৈরিই করে রেখেছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম।

'আমরা কিন্তু ২০১৫ সালেই এ ব্যাপারে প্রকল্প নিই। বিশ্বকে এখন বার্তা দিতে পারবো। আমরা কতটা পরিবেশ সচেতন। কতটা পরিবেশ বন্ধু। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এ গ্যাস বন্ধে করে সেখানে নতুন প্রযুক্তির ‘আর৬০০এ’। এ গ্রিন গ্যাস ব্যবহার করছি।

'ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চারটি ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় হাজার ফ্রিজ তৈরি হয়।  আজ একটি ইউনিটে পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করলাম। অন্যগুলোও শিগগির এ প্রযুক্তির আওতায় আসবে'- বলছিলেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ হিসেবে গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহের মধ্যে এইচএফসি গ্যাস অন্যতম। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস হলেও, তার তুলনায় প্রায় ১০ হাজার গুণ বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস এইচএফসি। তুলনামূলক সামান্য অল্প নিঃসরিত হলেও এইচএফসি বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিটা করে ব্যাপক মাত্রায়।

পৃথিবীকে সূর্যের মহাজাগতিক ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য ওজোন স্তরের যে বেস্টনি রয়েছে সিএফসি ও এইচএফসি গ্যাস মূলত সেই বেস্টনি ফুটো করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিসাধন করে।

কিগালি সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী উন্নত আর অগ্রসর অর্থনীতির ইউরোপীয় দেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে ১০ শতাংশ, ২০৩৬ সালের মধ্যে ৮৫ শতাংশ এইচএফসি গ্যাস ব্যবহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এভাবে চীন ও আফ্রিকার কিছু উন্নয়নশীল দেশ ২০২৪-২৯ সালের মধ্যে এইচএফসি গ্যাসের ব্যবহার ১০ শতাংশ, ২০৪৫ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক এবং উপসাগরীয় দেশসহ আরও অনেক উন্নয়নশীল দেশ ২০২৮ থেকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ৮৫ শতাংশ এইচএফসি গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের একটি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বিশ্বকে বাংলাদেশের নুতন পরিচয়। পৃথিবীর পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় রোধে প্রেরণা। বাংলানিউজকে এমনটিই বলছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছ উল আলম মন্ডল।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অ্যাসিসস্ট্যান্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশীদ আলম বাংলানিউজকে জানান, এইচএফসি গ্যাসের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হৃাস করার যে উদ্যোগ ওয়ালটন নিয়েছে তা সত্যিই অনুকরণীয়।

তিনি বলেন, এইচএফসি গ্যাস বাতিল করে নতুন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ওয়ালটনকে চার কোটি টাকা দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইউনিটগুলোতেও দ্রুত গতিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে বলেও আশা করেন তিনি।

ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডাইরেক্টর উদয় হাকিম বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের সর্ব সম্মতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ৪ অক্টোবর ইউরো পার্লামেন্টে অনুসমর্থিত হওয়ায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর জন্য তা ৪ নভেম্বর থেকে আইনি বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছে।

তার আগেই দেশের আবহাওয়া মণ্ডলের উষ্ণতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওয়ালটন পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী। কারণ রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, অ্যারোসল স্প্রের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। হিসাব অনুযায়ী বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ।

'আমরা উৎসতেই তা সংকুচিত করে পৃথিবীকে রক্ষায় প্রেরণার এক বার্তা দিলাম। এখন ওয়ালটনের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে নতুন করে চিনবে বিশ্ব'। যোগ করেন ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডাইরেক্টর উদয় হাকিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
জেডআর/এসএইচ

**
ওয়ালটন: কর্মসংস্থানে সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।