ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০১৬ ছিলো জ্বালানি তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
২০১৬ ছিলো জ্বালানি তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর

ঢাকা: ২০১৬ সালটা ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর। গেল বছর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম সব মিলিয়ে বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই পণ্যটির দাম বেড়েছে ৮ শতাংশেরও বেশি।

তবে বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর এসে আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। এদিন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী ছিল।

কিন্তু গত সাত বছর (২০০৯ সাল) পর এবারই সবচেয়ে বেশি বার্ষিক দরবৃদ্ধি ঘটেছে জ্বালানি তেলের।  

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে।

শুক্রবার নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) আগামী ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে ডব্লিউটিআই দাম ব্যারেলে ৫ সেন্ট কমেছে। দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৭২ ডলারে।

অন্যদিকে মার্চে সরবরাহ চুক্তিতে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ব্যারেলে ২২ সেন্ট কমেছে ব্রেন্ট অয়েলের দাম। দশমিক ৪ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬৩ ডলারে। ২০১৬ সালে সব মিলিয়ে ব্রেন্ট অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। বার্ষিক হিসাবে ২০০৯ সালের পর এ বছরই সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি ঘটেছে পণ্যটির।

বছরের শেষ দিন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার পেছনে নববর্ষের ছুটিতে বাজার বন্ধ থাকাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেল শোধনাগার বৃদ্ধির খবরও এদিন বাজারকে নিম্নমুখী অবস্থানে রাখতে কাজ করেছে।  

হিউজেসের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে তেল শোধনাগারের সংখ্যা বেড়েছে দু’টি। সব মিলিয়ে দেশটিতে বর্তমানে ৫২৫টি তেল শোধনাগার সক্রিয় রয়েছে।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে অব্যাহত দরপতনের মুখে প্রায় ৬০ শতাংশ দাম পড়ে গিয়েছিল পণ্যটির। এমন অবস্থায় শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল। একই চেষ্টা করেছে রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত আরো কয়েকটি শীর্ষ তেল উত্তোলক দেশ। চলতি বছরের শুরুতে ওপেক পণ্যটিতে উত্তোলনসীমা আরোপের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে দুই শীর্ষ উত্তোলক দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতার অভাবে সেবার জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানো সম্ভব হয়নি।

বছরের শুরুতে উত্তোলন কমানোর উদ্যোগ ভেস্তে গেলেও এতে দমে যায়নি ওপেক। তারা বছরজুড়েই শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে। এরই ফলে গত ৩০ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেকের বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি করে সংগঠনটি।

চুক্তি অনুযায়ী, ওপেকভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ৩ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করবে। ১ জানুয়ারি থেকে এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা। ওপেকের পাশাপাশি রাশিয়াসহ আরো ১১টি জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশ পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনতে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হলে শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলো দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করবে। মূলত এ দুই চুক্তির প্রভাবেই ধসে যাওয়া তেলের বাজারটির চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি চুক্তিগুলো পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তবে ২০১৭ সালের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে উঠে যাবে। ২০১৮ সাল নাগাদ প্রতি ব্যারেল তেলের দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৭০ ডলারে।

নিমেক্সে শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পাশাপাশি কমেছে গ্যাসোলিনের দাম। হিটিং অয়েলের দাম সামান্য বাড়লেও নিম্নমুখী ছিল প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম।

জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিন বিক্রি হয়েছে ১ দশমিক ৬৬৫১ ডলারে। আগের দিন (বৃহস্পতিবার) এর চেয়ে ১ শতাংশ বা ১ দশমিক ৬৯ সেন্ট বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল পণ্যটি। বার্ষিক হিসাবে ২০১৬ সালে গ্যাসোলিনের দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০০৯ সালের পর এ বছর সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি ঘটেছে পণ্যটিতে।

২০১৬ সালে বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ, যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি। একইভাবে হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। ২০০৭ সালের পর এ বছর সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি ঘটেছে হিটিং অয়েলের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।