ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেরানীগঞ্জে হতে যাচ্ছে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
কেরানীগঞ্জে হতে যাচ্ছে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কেরানীগঞ্জে হতে যাচ্ছে বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, জীবাশ্ম-জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সহায়তায় বিদ্যুৎ বিভাগের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অনুরোধে স্রেডার তত্ত্বাবধানে ‘ডয়েচে গেজেলশাফট ফর ইন্টারন্যাশনাল সুজামেনাবাইত (জিআইজেড)’ বাংলাদেশের সাবসটেইনেবল অ্যানার্জি ফর ডেভলপমেন্ট (এসইডি) প্রোগ্রামের সহায়তায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্টিকাসকে নিয়োগ করা হয়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য স্রেডা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বোর্ড (বিউবো), এসইডি’র সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে জার্মান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাঠ সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে। মাঠ সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বিদ্যুৎ বিভাগ কেরানীগঞ্জে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিউবো ক্রয় করবে এবং প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে বিউবো’র জমিতে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।

জানা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কেরানীগঞ্জে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা সাত লাখ ৯৪ হাজার ৩৬০ জন। গত চার বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং গার্মেন্টস ও অন্যান্য কল-কারখানায় কর্মরত ভাসমান জনসংখ্যার স্থানীয় হিসেব মোতাবেক প্রায় ২৫ লাখ জনগণ এ উপজেলায় বসবাস করে।

সমীক্ষা অনুযায়ী কেরানীগঞ্জে প্রতিদিন প্রায় ৬শ’ মেট্রিক টন (জনপ্রতি ০.২৪ কিলোগ্রাম) বর্জ্য বিভিন্ন খাল, নদী, বা পতিত ভূমিতে ফেলা হচ্ছে। অপরদিকে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ১০৬২ মেট্রিক টন (জনপ্রতি ০.৪২৪৮ কিলোগ্রাম) বর্জ্য নিষ্কাশিত হচ্ছে।
 
বর্তমানে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নে ৬০টি ভ্যানের মাধ্যমে ১২০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৪০টি ভ্যানের মাধ্যমে ৮০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বর্জ্য পরিবহন করে ঝিলমিল প্রকল্প, চুনকুটিয়া, তেঘরিয়া বাজার ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ফেলছে। কিছু স্থানে আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হয় আবার অনেকস্থানে গর্ত করে ভরাট করা হয়।

এসব বর্জ্য থার্মাল (মনো-ইনসিনারেশন, কো-ইনসিনারেশন), গ্যাসিফিকেশন, পাইরোলিসিস, ওয়েট ডাইজেশন ও ড্রাই-ডাইজেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যাবে। তবে সব পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা, স্থান-কাল বিবেচনা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্রাই-ডাইজেশন পদ্ধতির দুইটি মাধ্যম বক্স-ডাইজেশন ও প্লাগ-ফ্লো-প্রসেস সুপারিশ করেছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ধারণা, ২০ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতার বক্স-ডাইজেশন প্লান্টের জন্য আনুমানিক ব্যয় হতে পারে ৮.২ মিলিয়ন ইউরো। ২০ বছর মেয়াদে সম্ভাব্য প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় ০.০৫৫-০.২০ ইউরো হতে পারে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মো. জজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনার কারণে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু জ্বর ও অন্যান্য রোগের সম্ভাবনা কমে যাবে। প্রকল্পের বর্জ্যের উচ্ছিষ্ট জৈব সার ও নিকটবর্তী ইট-ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। তবে সকল ধরনের বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে প্রয়োজন নয়। সেজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এ ধরনের আরও প্রকল্প ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বাস্তবায়ন করা যাবে। আপাত দৃষ্টিতে এ প্রকল্প কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ প্রকল্পের খরচ অনেক কমে আসবে। বিশেষ করে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা না করে পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যয় বিবেচনায় নেওয়া হলে এ প্রকল্পটির সুবিধাসমূহ এর ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
এনটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।