ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই, কমবেও না সহসা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৭
পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই, কমবেও না সহসা! একদিনেই কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। ছবি: শাকিল

ঢাকা: মাত্র একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ক্রমাগত বাড়তে থাকা পেঁয়াজের এ অগ্নিমূল্য সহসাই কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যটির এ ঝাঁজে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ভোক্তাদের।

সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গেলে পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, শনিবার প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা ও আমদানি নির্ভর ভারতীয় মোটা নাসিক পেঁয়াজ ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। এ হিসেবে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৪ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার (০৪ আগস্ট) যা যথাক্রমে ৩৯ ও ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিলো।
 
পাইকারির প্রভাবে বেড়েছে খুচরা মূল্যও। গুলশান-২ নম্বর কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা বাবু মিয়া জানান, শনিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। শুক্রবার যা যথাক্রমে ৪৫ টাকা ও ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিলো।

পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন বাবু।
 
বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চাহিদামতো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি-বন্যার কারণে গুদামের অনেক পেঁয়াজে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা শুনেছি, ভারতেও বন্যা হয়েছে। যে কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই’।
 
শ্যামবাজারেও কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ৪৪-৪৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩৮-৪০ টাকা।
 
ভাটারা থানার ঢালিবাড়ি কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমানও কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও আমদানি নির্ভর পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০-৪২ টাকা। অন্যদিকে এক কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও ছিল ৩৫ টাকা, আর এখন দাঁড়িয়েছে ৪৩-৪৫ টাকা।  

একদিনের ব্যবধানে ৫ টাকা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে ৮ টাকা থেকে  ১০ টাকা করে সব ধরনের পেঁয়াজের দর বেড়েছে বলে জানান সবগুলো বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা। খুচরা বাজারেও এ বৃদ্ধির হার প্রায় একই।

তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দাবি, অধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে শুধু দেশি পেঁয়াজের দামই বাড়তির দিকে। স্থিতিশীল রয়েছে আমদানি নির্ভর পেঁয়াজের দাম।
 
টিসিবি’র প্রধান কর্মকর্তা (বাণিজ্যিক) আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফরিদপুরসহ দেশের অনেক স্থানে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে শুধু দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে আমদানি নির্ভর পেঁয়াজের দাম ঠিকই আছে’।

তিনি বলেন, ‘কবে নাগাদ পেঁয়াজের দাম কমবে, তা সহসাই বলা যাচ্ছে না। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কৃষকের ঘরে নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে পানিতে নষ্ট হওয়ায় এবার নতুন পেঁয়াজের উৎপাদন কম হবে। ফলে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না যে, পেঁয়াজের দাম কবে কমবে’।
 
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং জানায়, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের উৎপাদনে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। উৎপাদনের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সংরক্ষণে। এবার দেশে দুই লাখ হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ২১ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে।
 
পাবনা, ফরিদপুর, যশোর, রাজশাহী, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ উত্পাদিত হয়। আর পেঁয়াজের বীজ উত্পাদনে ফরিদপুরের নাম সবার আগে আসে বলে সেখানে উৎপাদনও হয় সবচেয়ে বেশি।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) চৈতন্য কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজের উৎপাদন খুব একটা কম হবে না। কৃষকরা একটা সময়ে ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেক যত্ন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। কিন্তু এবার অতিবৃষ্টির মাঝে সংরক্ষণ করতে গিয়ে তাদের ঘরের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে’।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি পেঁয়াজ ভারত, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।

পেঁয়াজের দাম বাড়তেই থাকায় উদ্বিগ্ন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। অতিরিক্ত সচিব মুন্সী সফিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম এতোটা বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মনে হয়, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় মজুদদারেরা এর সুবিধা নিচ্ছেন। আর বৃষ্টিতে সামান্যই সমস্যা হয়েছে। এছাড়া কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না’।
 
পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘টিসিবিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আগামী সোমবার (০৭ আগস্ট) বৈঠকে বসবো। এরপরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো’।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।