ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মেরিকোর ভ্যাট আদায়ে উদাসীন এনবিআর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
মেরিকোর ভ্যাট আদায়ে উদাসীন এনবিআর

ঢাকা: বিপুল অংকের ভ্যাট ফাঁকি দিলেও মেসার্স মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বছর পাঁচেক আগেই প্রতিষ্ঠানটি ৮২ কোটি ৪১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩১ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় এনবিআর। তাই ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের অর্থ আদায়ে ২০১২ সালের ১২ মার্চ মেরিকোকে চিঠিও দেন তৎকালীন কমিশনার ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন।

টাকা পরিশোধের জন্য সেই চিঠিতে ১০ দিন সময় বেঁধে দেন তিনি। কিন্তু অভিযুক্ত মেরিকো ওই চিঠির নির্দেশনা মানার কোনো গরজ দেখায়নি। আর টাকা আদায়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এনবিআরও।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেরিকো কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটনে একটি তদন্ত টিম গঠন করে। সেই তদন্ত টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরিকো কোম্পানি ৮২ কোটি ৪১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩১ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়।

কিন্তু এরপর বৃহৎ করদাতা ইউনিট আরও উচ্চতর তদন্তের একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দেয়, মেরিকো কোম্পানি কোনো ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি। কিন্তু প্রথম অনুসন্ধান টিম ভ্যাট ফাঁকি না হওয়ার দাবি মানতে রাজি না হলে বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। পরে উচ্চ মহলের চাপে বিষয়টি সেখানেই থেমে যায়। তারপর থেকে এ নিয়ে এনবিআর কর্তৃপক্ষ উদাসীন রয়েছে।

এদিকে বৃহৎ করদাতা ইউনিট বলছে, মেরিকো কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি নিয়ে তারা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। কেননা একটি কমিটি ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। অন্য কমিটি বলেছে ভ্যাট ফাঁকি হয়নি। তারওপর বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া না করারও চাপ আছে খোদ এনবিআরেই।  

প্রথম তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরিকো কোম্পানির উৎপাদন স্থল পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানের ক্রয় হিসাবে উৎপাদিত ৫০০এমএল এর ৩০ হাজার ৩৯৮ পিস প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল লিপিবদ্ধ পাওয়া যায়।   কিন্তু গুদাম পরীক্ষা করে ২০ হাজার ৩৯৮ পিস বোতল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১০ হাজার বোতল কম পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তখন প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানেজার মো.খায়রুল ‍আলম রুবেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ১০ হাজার পিচ নারিকেল তেলের বোতল গাজীপুরে অবস্থিত প্রত্যাশা গুদামে আছে বলে দাবি করেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তদন্ত দল গাজীপুরে গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে ১০ হাজার পিস বোতলে পণ্য মজুদ দেখতে পায়। তবে গুদামে রক্ষিত ওইসব পণ্য মেরিকো কোম্পানির কিনা তা নিশ্চিত করতে কোন দলিল-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় তারা।  

আরো জানা যায়, উৎপাদন স্থল থেকে প্যারাসুট কোকোনাট অয়েলের বোতল অপসারণের মাধ্যমে প্রযোজ্য মূসক পরিশোধের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছে মেরিকো কোম্পানি। অপসারণকৃত পণ্যের একক মূল্য ১৩৩ টাকা ৩৪ পয়সা। সে হিসাবে ১০ হাজার পিস প্যাকের মূল্য দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪শ টাকা। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসকের পরিমাণ ২ লাখ ১০ টাকা। যা ফাঁকি দিয়েছে মেরিকো কোম্পানি।

উপরন্তু সংরক্ষিত ক্রয় পুস্তক (মূসক-১৬) পরীক্ষায় দেখা যায়, নারিকেল তেল উৎপাদনের কাঁচামাল কোপরা আমদানির বিল অব এন্ট্রি ক্রয় পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে চলতি হিসাব পুস্তকের (মূসক-১৮) মাধ্যমে রেয়াত নেওয়া হয়েছে। আমদানিকৃত কোপরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করার পর তা আর উৎপাদন স্থানে আনা হয় না বলেও কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই খালাসকৃত পণ্য মেরিকো কোম্পানির চুক্তি ভিত্তিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা অয়েল ও ইসিও (ECO) অয়েল নামে দুটি প্রতিষ্ঠানে যায়।

কিন্তু তদন্ত কমিটি তখন এনবিআরের সিআইসি সেল থেকে মেরিকো কোম্পানির ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত কোপরা আমদানির তথ্য নেয়। তাতে দেখা যায়, ওই সময়কালে মেরিকো কোম্পানি ৫২৪ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫ টাকার কোপরা আমদানি করেছে। যার উপর প্রদেয় মূসক বাবদ ৮২ কোটি ৩৯ লাখ ২৭ হাজার ৩২১ টাকা চলতি হিসাবে রেয়াত নেওয়া হয়েছে। যা মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা (ট) (ঠ) এবং একই আইনের বিধি ১৯(২) এর পরিপন্থি।

মেরিকো কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে একটি কমিটি ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। পরবর্তীতে অন্য একটি কমিটি ভ্যাট ফাঁকি হয়নি বলেও রিপোর্ট দেয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যেই দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তাহলে প্রথম প্রতিবেদনটি কি মিথ্যা ছিলো?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি বলতে পারছি না। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে কথা বলবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।