ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে নাকচ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে নাকচ

ঢাকা: নতুন দু’টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রায় ৬ মাস পর তার সেই প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকগুলো লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পালন করতে চেয়েছিল তা যথাযথভাবে পালন করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন উত্থাপন ও এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় নতুন দুই ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।


 
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পিপলস ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলা ব্যাংক লিমিটেড নামে দুটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে একটি প্রস্তাব পাঠান অর্থমন্ত্রী।
 
এতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবরে আমরা ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছি। সেই সময়ে আমার ভুলে চুড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়নি পিপলস ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এর উদ্যোক্তা নিউইয়র্ক প্রবাসী সন্দ্বীপের এম এ কাশেম। এই ব্যাংকটির লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়েছি।
 
এছাড়াও বাংলাব্যাংক লিমিটেড’র প্রধান উদ্যোক্তা নড়াইলের জসিম উদ্দিন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজির স্ত্রীর নামে নড়াইলে তার পৈতৃক বাড়িতে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেই হাসপাতালের ব্যয় নির্বাহের জন্য এই ব্যাংকটির সিএসআরের অর্থ ব্যয় করা হবে।
 
তাই ব্যাংক দুইটির লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব করছি। এছাড়াও চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্ভবত আমাদের এই মেয়াদে আরও কোন ব্যাংকের লাইসেন্স দেব না।  
 
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবিরের কাছে এই প্রস্তাবটি পাঠিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।
 
অর্থমন্ত্রীর পাঠানো এই প্রস্তাবের ছয়মাস পর তাদের অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৩১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে দেশে নতুন ব্যাংক স্থাপনের লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ারভুক্ত। নতুন ব্যাংক স্থাপনের প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবসাইট ও পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহবান করে এবং দাখিলকৃত আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসৃত প্রথার আলোকে পর্যালোচনা/বিশ্লেষণ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিষ্পত্তি করা হয়।
 
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, আবেদনপত্র দুটির বিপরীতে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহীত কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠবে। যার ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
তাছাড়াও বর্তমানে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ মুহূর্তে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নতুন কোনো কনভেনশনাল কিংবা শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজন লক্ষ্যণীয় নয় মর্মে প্রতিভাত হয়।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, ২০১৩ সালে লাইসেন্স পাওয়া ১১টি ব্যাংক নীট মুনাফার ১০ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে (সিএসআর) ব্যয়, মোট ঋণ ও অগ্রিমের ৫ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় জারি করা নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি ও পল্লী ঋণে বিনিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাত্রা শুরুর ৩ বছরের মধ্যে গণ প্রস্তাব ইসু করতে বলা হয়েছিলো। তবে কোন ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব নির্দেশনা পালন করতে সক্ষম হয়নি।
 
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমাদের দেশে বেশি সংখ্যক ব্যাংক হয়েছে। এজন্য আইন-কানুন আমাদের ঠিকঠাক করতে হবে। কয়েকটি আইনকানুন আমাদের নেই, যেমন একীভূতকরণ ও দেউলিয়া (মার্জার, ব্যাংকক্রাপসি)। এসব আইন-কানুন আমাদের ভালো নয়, এগুলোকে তৈরি করা প্রয়োজন। আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনের একীভূতকরণ ও দেউলিয়া ধারা সংশোধন করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
এসই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।