ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ছিন্নমূল মানুষের স্বার্থে বিড়িশিল্পকে বাঁচাতে হবে

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
ছিন্নমূল মানুষের স্বার্থে বিড়িশিল্পকে বাঁচাতে হবে ছিন্নমূল মানুষের স্বার্থে বিড়িশিল্পকে বাঁচাতে হবে

ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া থেকে: সম্প্রতি বিড়িশিল্পে নতুন করে বিনিয়োগ না বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি বছর বিড়িশিল্প মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। ওই সময়ে মন্ত্রী বলেন, বিড়ির সময় শেষ। এটা অনেক ক্ষতিকর। এটা রাখা যাবে না। আপনাদের (বিড়িশিল্প মালিক) যা বিনিয়োগ রয়েছে, সেটা শেষ হওয়ার জন্য তিন বছর সময় দেয়া যাবে। নতুন করে আর বিনিয়োগ করবেন না।

অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর আন্দোলন শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিড়ি শ্রমিকরা। বিভিন্ন মহল থেকে এ বক্তব্যের জন্য সমালোচিতও হন অর্থমন্ত্রী।

এমনকি চলতি বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি ও সিগারেটে বৈষম্যমূলক শুল্ক নির্ধারণ করায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর ব্যাপক সমালোচনা করেন বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

এরপর থেকে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজের একটি দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিড়িশিল্পের অবস্থা এবং এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের অবস্থান নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর এবং কুষ্টিয়ার বিড়িশিল্পের অবস্থা তুলে ধরা হয় পাঠকদের জন্য।

গত ক’দিন ধরে এসব এলাকা ঘুরে জানা গেছে, যশোরের নাভারণ এলাকায় ৩টি এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় রয়েছে ১৯টি বিড়ি ফ্যাক্টরি। এসব ফ্যাক্টরিতে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই ৩০/৩৫ বছর ধরে বিড়ি বানানোর কাজে জড়িত। এতো বছর ধরে শেডের (ঘরের) মধ্যে বসে কাজ করার কারণে এখন রোদে কাজ করতে পারেন না। শরীরে জ্বালাপোড়া করে।
 
‘নতুন কিছু এখন আমাদের পক্ষে শেখাও সম্ভব না’ বলে জানালেন বিড়িশ্রমিক বিপ্লব হোসেন (৩২)। বিপ্লব ১৩ বছর ধরে বিড়ি বানানোর কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি এখন অন্য কাজ শিখতে পারবো কিন্তু রোদে বের হলে গা (শরীর) জ্বলে।
একইভাবে এসব এলাকার ফ্যাক্টরিগুলো ঘুরে জানা গেছে সেখানে কয়েক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিকও কাজ করেন। যারা অন্য কোথাও কাজের সুযোগ পায় না, তারা এখানে সারাদিন বসে বিড়ি তৈরি করে। এখন বিড়িশিল্প বন্ধ হলে তাদের বেকার হয়ে থাকতে হবে।

তবে ভেড়ামারা নাসির বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান মনে করেন, এই শিল্প বন্ধ হলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।  

তিনি বলেন, এতে দেশে ২৫ লাখ লোক বেকার হবে। সরকার প্রতিবছর যে বড় অংকের রাজস্ব পায় তা বন্ধ হবে। বৃহত্তর রংপুরের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে এবং দেশের প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায়, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের একটা বড় অংশ দিশেহারা হয়ে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, দেশের তামাকচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার বিড়ির ক্রেতাও কিন্তু এসব দিনমজুর, কৃষক, খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। তাদের পক্ষে সিগারেট কেনা সম্ভব নয়। ফলে তখন তাদের টাকার দরকার হবে বেশি। আবার কাজ হারিয়ে তারা বেকার হয়ে পড়বে। এতে দিশেহারা হয়ে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ ছিনতাই, চোরাচালানে জড়িয়ে পড়বে। এজন্য ছিন্নমূল মানুষের স্বার্থেই বিড়িশিল্পকে বাঁচাতে হবে।

‘বিড়িতে বেশি ক্ষতি হয়’ অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতি হয় না সেটা আমি বলছি না। কিন্তু একটি বাসের যদি ব্রেক কেটে যায় তখন আপনি দুইজনকে মেরে বাসের সব যাত্রী রক্ষা করবেন নাকি সবাইকে মেরে দুই জনকে বাঁচাবেন? এখানে সুবিধার তুলনায় ক্ষতিটা খু্বই কম। তাই এটাকে বাঁচাতে হবে। আর সিগারেটে নতুন করে নিকোটিন মেশানো হয় কিন্তু বিড়িতে শুধু তামাক থাকে কোনো অতিরিক্ত নিকোটিন থাকে না। তাহলে ক্ষতি কোনটাতে বেশি আপনিই বলুন।

**নিরুপায় বিড়ি শ্রমিকরা তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
এসআইজে/জেএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।