ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে বেকার হবে ৬শ ‘প্রতিবন্ধী’ শ্রমিক 

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে বেকার হবে ৬শ ‘প্রতিবন্ধী’ শ্রমিক  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে: ‘আমাকে কেউ কোনো কাজে নেয় না। আমি একজন অচল মানুষ, হাটতে-চলতে পারি না। এক সময় পরিবারের বোঝা ছিলাম। সবাই অন্যরকম আচরণ করতো। কিন্তু বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ নেওয়ার পর দিনে আমি ২৫০ টাকা আয় করি। এখন কারো বোঝাও নই।’

কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী বিড়ি শ্রমিক ওমর ফারুক (৫৫)। শৈশবে ওমর ফারুক আর দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন।

কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পা দুটো চিকন (পোলিও) হয়ে যায়। চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওমর ফারুকের।

অভাবের সংসারে তার আর চিকিৎসাও করাতে পারেনি পরিবার। ধীরে ধীরে আজীবনের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় ফারুককে। বাধ্য হয়ে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।  

ছবি: বাংলানিউজকুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বিড়ি কারখানায় তার মতো আরও অনেক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। যাদের সবাই বিড়ি কারখানায় আয় করা টাকায় জীবিকা নির্বাহ করেন।  

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) একটি কারখানায় বাংলানিউজের এই প্রতিবেদকের কথা হয় ওমর ফারুকের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার আয়ের টাকায় সংসার চলে। এর মধ্যে আবার ছেলেটা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার আবার আলাদা খরচও দিতে হয়।

স্ত্রী ছাড়াও সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি মেয়ে দু’টোকে বিয়ে দিয়েছেন। ফলে সংসারের চাপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখন কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ফারুক।  

তিনি বলেন, ‘এ (চাকরি হারানো) খবরে এখন রাতে ঘুমাতে পারি না। এই চাকরি চলে গেলে খাবো কি?’ আবারও এও বলেন,‘হয়তো ব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তা কিছু একটা করবে, কিন্তু যে সমস্যায় পড়বো ওই সময়টা পাড়ি দেবো কিভাবে? 

বিড়ি শ্রমিক ওমর ফারুক বলেন, শুনেছি ফ্যাক্টরি নাকি সরকার বন্ধ করে দেবে। বন্ধ হলে আমরা কি খাবো। বাঁচবো কিভাবে। আমাকে তো কেউ কাজে নেয় না। এখন দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি মানুষের কাছে সাহায্যও চাইতে পারবো না। আর সাহায্য নেওয়াও তো মানুষ ভালো চোখে দেখে না।  

সমাজ কল্যাণ অধিদফতর থেকে ভাতা পান কিনা? এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গেছি। বলে পরে আয়, এখন হবে না। আর চেয়ারম্যানের লোকজন বলে ৫ হাজার টাকা দিলে আমার কার্ড দ্রুত হয়ে যাবে। আমি এতো টাকা কই পাবো? তাই আর যাই না।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ওমর ফারুক-ই নন, ভেড়ামারায় এ রকম ৬ শতাধিক শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ১৯ টি বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে এসব শ্রমিকের দাঁড়ানোর কোনো জায়গা থাকবে না।  

ভেড়ামার বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় ১৯ টি বিড়ি ফ্যাক্টরিতে সরাসরি ১০ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া তাদের পরিবারও পরোক্ষভাবে এ কাজ করে।

‘এরমধ্যে ৬ শতাধিক প্রতিবন্ধী শ্রমিক রয়েছেন। অন্য কোনো কাজে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় না। একমাত্র বিড়ি ফ্যাক্টরিতে তারা কাজ করার সুযোগ পান। এখন এটা বন্ধ করে তাদের মানুষের দয়ার পাত্র বানানো ছাড়া আর কিছু হবে না। ’

তিনি বলেন, সরকার আমাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে বিড়ি কারখানা বন্ধ করে দিক। তখন আমরা ওই কাজই করবো যেটা সরকার ব্যবস্থা করবে। না হয় পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।  
 
আরও পড়ুন>>
** 
ছিন্নমূল মানুষের স্বার্থে বিড়িশিল্পকে বাঁচাতে হবে
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
এসআইজে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।