ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসিকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুর নামে মামলা হচ্ছে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৭
বেসিকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুর নামে মামলা হচ্ছে

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভবন ক্রয় সর্ম্পকিত সরকারের দুই দফা নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভবন কেনায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মতিয়ার রহমান বেসিক ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার মো. ইকবালকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
 
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগে আশানুরূপ কিছু দেখছেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।


 
২০১০ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার মতিঝিলে ৫১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের স্পেস কেনার জন্য সিঙ্কু আকরামুজ্জামানের সঙ্গে চুক্তি করে বেসিক ব্যাংক। চুক্তি মোতাবেক বেসিক ব্যাংক আকরামুজ্জামানকে ৮১ কোটি টাকা দেবে। তিনি ১৫ তলা ভবন তৈরি করে ১২টি তলা দেবেন বেসিক ব্যাংকের নামে। ভবনের নাম হবে ‘জামান বেসিক ব্যাংক টাওয়ার’।
 
তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভবন ক্রয় বিষয়ে সরকারের ১৯৮৫ ও ১৯৯৮ সালের দুই দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ভবন বা ইমারত নির্মাণ, পুরনো ভবনের সম্প্রসারণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতির (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) অনুমোদন নিতে হবে।
 
এই নির্দেশনা না মানায় ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চ‍ুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পর্যায়ে বা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তরফে ফৌজদারি মামলা দায়েরের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি হওয়ার দিনই বেসিক ব্যাংক ৪০ কোটি টাকা দিয়ে দেয় আকরামুজ্জামানকে। পরে কয়েকটি কিস্তিতে ব্যাংক তাকে আরও ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছে। ভবনের কোনো রকম একটি কাঠামো নির্মাণ শেষ হয় ২০১৩ সালে। মোট ৭৬ কোটি টাকা দিলেও এখন পর্যন্ত ভবনের একটি তলাও বুঝে পায়নি বেসিক ব্যাংক।
 
বর্তমানে মতিঝিলে ২২ তলা ভবনের কাঠামোতে ‘জামান বেসিক ব্যাংক টাওয়ার ভবন’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো আছে।
এছাড়া ঋণ বিতরণের নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় ২০১৪ সালের জুলাইয়ে বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় সরকার। মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু।
 
অনুমোদন ছাড়া ভবন কেনার বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নজরে আসায় চলতি বছরের ৭ আগস্ট বেসিক ব্যাংকের বর্তমান এমডি খন্দকার মো. ইকবালকে চিঠি দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে চুক্তি ও অর্থ পরিশোধ কীভাবে হলো এবং ভোগদখল পেতে ব্যাংকের আগের ও বর্তমানের পরিচালনা পর্ষদ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়।
 
বর্তমান পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছর পার হতে চললেও মোটা অঙ্কের আর্থিক সংশ্লিষ্টতার এ বিষয়টি এত দেরিতে কেন জানানো হলো, তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠিতে। বেসিক ব্যাংকের এমডি ২১ আগস্ট একটি ব্যাখ্যা দিলেও অসম্পূর্ণ জবাবের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাতে সন্তুষ্ট হয়নি।
 
এবিষয়ে জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আগে এটি ঘটেছে। বিষয়টি আমরা জানার পর সরকারকে জানিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আমাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আমরা জবাব দিয়েছি।
 
মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এর আগেও অর্থ মন্ত্রণালয় এধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এতোকিছুর পরও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু কিভাবে পার পেয়ে যায়? কেন এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্বলতা কোথায়? আসলে সুশাসন আর জবাবদিহিতার অভাবেই এরকম ঘটনা ঘটছে।

ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।