ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ব্রেক ফেল’ করা ভ্যাট আইন নিয়ে আবার গবেষণা

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
‘ব্রেক ফেল’ করা ভ্যাট আইন নিয়ে আবার গবেষণা

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) শুরুতেই অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ‍আইন বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন থেকে পিঁছু হটে সরকার। তবে নতুন অর্থবছর শুরুর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে বেশ জোর দিয়েই বলা হয়েছিলো, ‘এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবেই’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি।

তবে এবার আর পিঁছু হটতে চায় না এনবিআর। গতবার নতুন ভ্যাট আইনে যেসব সমস্যার কথা বিভিন্ন মহল থেকে উঠে এসেছে সেগুলো যাতে এবার আর না আসে সেজন্য কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।

  বারবার ব্রেক ফেল করা নতুন ভ্যাট আইনটি আগামী অর্থ বছরে তথা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কিভাবে বাস্তবায়ন/কার্যকর করা যায় সেটা নিয়ে আবার নতুন করে গবেষণা করা হবে। রোববার (০৮ অক্টোবর) থেকে তা শুরু হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এবারের গবেষণায় ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব কত বাড়বে, কোন কোন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, আইনটি বাস্তবায়নে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে এনবিআর। এমনকি কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় গবেষণা করা হবে তা নিয়েও ব্যবসায়ী ও গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে পুরনো ভ্যাট আইনের আওতায় অনলাইন ব্যবস্থা চালু করবে এনবিআর। এতে অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন জমা ও কর পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে।

ইতোমধ্যে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সনাতনী ভ্যাট নিবন্ধনে রিটার্ন নেবে না এনবিআর। আবার নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নের জন্য আরও সংশোধন করছে তারা। অপরদিকে ভ্যাট অনলাইনও সচল রাখা হবে।

চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেময় অর্থনীতিবীদরা বলেছিলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে এনবিআরের কারিগরি বা টেকনিক্যাল প্রস্তুতির ঘাটতি, রাজনৈতিক নেতাদের মত পার্থক্য এবং প্রশাসনিক দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক অদক্ষতার অভাবই দায়ী। এ কারণেই ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর।
 
নতুন ভ্যাট আইনটি ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়। আইনটি পাস করা হলেও প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সময় রেখে তা ২০১৫ সালের ১ জুলাই কার্যকর করার কথা ছিল। পরে আরও দুই বছর পিছিয়ে দিয়ে চলতি অর্থবছরে পাস হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে জনমতের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভ্যাট আইনটি স্থগিত করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ভ্যাট আইনকে আরও বেশি সহজ করতে এনবিআরকে নির্দেশনা দেন।    

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিশাল এই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রথম থেকেই অর্থনীতিবীদদের সমালোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে সংস্থাটি। তবে এখন এনবিআর বলছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার পরও রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে সেটা অর্জন সম্ভব হবে।

ভ্যাট অনলাইনের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল হাসান জানান, নতুন ভ্যাট আইনে কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে, নতুন কোন কোন বিষয় যোগ করা যেতে পারে, ব্যবসায়ীরা কোথায় ক্ষতির সম্মুখিন হবেন, ব্যবসায়ীরা কি কি সুবিধা পাবেন, আইনটি বাস্তবায়ন হলে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে এইগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে।

নতুন করে ভ্যাট আইন নিয়ে গবেষণার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে নতুন করে আর গবেষণার কিছু নেই। প্রতি অর্থ-বছরই নতুন কোনো অযুহাতে ভ্যাট আইনটি আর বাস্তবায়ন হয় না। তবে আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে এনবিআরের বড় দুর্বলতা রয়েছে। যার কারণে বারবারই আইনটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় এনবিআর। কেননা ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো নিতে পারে না কর্তৃপক্ষ। ফলে এখন নতুন করে আবার কোনো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।

জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো খুঁজে বের করে তার সমাধান করা হবে। এজন্য ব্যবসায়ী, অথর্নীতিবীদ ও গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের মতামতগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। সর্বোপরি আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আইনটি যেন বাস্তবায়ন হয় সেজন্য এনবিআর সবকিছু করবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
এসজে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।