ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল বন্দর পানিতে সয়লাব, হুমকিতে পণ্যের গুদাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
বেনাপোল বন্দর পানিতে সয়লাব, হুমকিতে পণ্যের গুদাম সামান্য বৃষ্টিতেই বেহাল, সয়লাব বেনাপোল বন্দর; ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর) : অব্যবস্থাপনার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে পানি জমে থই থই করছে। অবস্থা এমনই বেগতিক যে, পণ্যের গুদামে যে কোনো সময় পানি ঢুকে পড়তে পারে। তেমনটি হলে তা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের তরফে বারবার  বারবার দাবি পেশ করা সত্ত্বেও সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

এর ফলে ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগ ও ক্ষতির শিকার হয়ে আসছেন।

অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে।

বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বেনাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানি পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে বন্দরের ভেতরে অংশে ছোট-বড় গর্ত পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। পণ্য পরিবহনকারী যানবাহনগুলো গর্তে আটকে যাচ্ছে। কখনো কখনো গর্তে পড়া যানবাহন বিকল হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে, পণ্যাগারের প্রবেশমুখেও হাঁটু সমান পানি। সেখানটায় পায়ে হেঁটে যাতায়াতেরও কোনো সুযোগ নেই। পণ্য রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় আমদানি করা মূল্যবান সামগ্রী খোলা আকাশের নিচে পানি ও কাদায় নষ্ট হচ্ছে।

জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ অধিক। কিন্তু নানা সমস্যায় সেই সম্ভাবনাও নষ্ট হচ্ছে।
বন্দরে মাত্র ৩২টি পণ্যাগার, একটি রফতানি টার্মিনাল ও একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। বন্দরে পণ্য ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার মেট্রিক টন। অথচ সারাবছরই সেখানে দ্বিগুণ পরিমাণ আমদানি পণ্য থাকে।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেনাপোল বন্দর প্রায় ২৫ হাজার মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িত। সরকার বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে এই স্থলবন্দর থেকে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়শনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের সর্ববৃহৎ এ স্থলবন্দর থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ বন্দরের দশা সবচেয়ে খারাপ। প্রায় একযুগ ধরে এখানে উল্লেখ করবার মতো কোনো  উন্নয়নকাজ হয়নি।
বছরখানেক আগে নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ শুরু হলেও ধীরগতির কারণে তাতে করে ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। এছাড়া এই বন্দরের নানাবিধ  অব্যস্থাপনা ও হয়রানির কারণে  অনেক ব্যবসায়ী  এ পথে আমদানি বন্ধ করে দিচ্ছেন।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার কমার্সের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যোগাযোগ সহজতর হওয়ার কারণে এপথে বাণিজ্যের সুবিধার্থে সার্কভূক্ত ৪টি দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নে অসহনীয় বিলম্বের কারণে নানান সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। সুষ্ঠু-স্বাভাবিক  বাণিজ্যের স্বার্থে এখানকার অবকাঠামোকে ঢেলে সাজানো জরুরি। অবকাঠামোর সুবিধা না পেলে ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তিরও অবসান হবে না। এতে করে তারা এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্য করতে স্বস্তি বোধ করবেন না। ব্যবসায়ীদের এই দুর্ভোগ ও হতাশা দ্রুত করা জরুরি।

বেনাপোল আমদানি ও রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে খেসারত ও ক্ষতি  সবই ব্যবসায়ীদেরই বহন করতে হয়। এখানে অনেক বড় বড় অঘটন ঘটেই চলেছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। অটোমেশনেরও ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সন্তোষজনক নয়। অথচ কর্তাদের প্রতিশ্রুতির শেষ নেই।

বন্দর শ্রমিকরা জানান, বন্দরের অবস্থা দেখে মনে হয় এ যেন কোনো হাওড়-বিল। একটু বৃষ্টি হলেই বন্দর গুদামে পানি প্রবেশের ঝুঁকি থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কাদাপানিতে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। অনেক সময় ভারী পণ্য খালাস করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দ্রুত চিকিৎসা না পেয়ে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। অনেক দিনের দাবি একটি হাসপাতাল, সেটিও রয়ে গেছে অধরা।

বেনাপোলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ স্থলবন্দরের খণ্ডকালীন সদস্য জাহিদ মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, বন্দরে নতুন পণ্যাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। আমদানিকারকদের পণ্যের ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে তাদের নজর রয়েছে। আর পণ্যজট কমাতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে এ বন্দর আধুনিক বন্দরে রূপ নেবে। ততদিন পর্যন্ত সবাইকে একটু কষ্ট ভোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়:১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।