ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যে কারণে ব্যাহত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবাণিজ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
যে কারণে ব্যাহত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবাণিজ্য সংবাদ সম্মেলন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: অবকাঠামোগত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা ও ব্যবহারের অভাব এবং ২৪ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম সচল না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি। এর বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যয় হচ্ছে দীর্ঘ সময়।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) এর গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও গবেষকদল এই দাবির সত্যতা খুঁজে পায়নি। বন্ধ ছিল শুক্রবার। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখা হয় বলে কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১০ টায়, চলে বেলা ২টা পর্যন্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনাপোল বন্দরে ৪০ হাজার টন পণ্য মজুদ করার ক্ষমতা থাকলেও প্রায় ১লাখ টন পণ্য বিভিন্ন স্থানে খোলা জায়গায় মজুদ করে রাখা হয়েছে। ৪৩টি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ ছাউনি থাকলেও ৭টিই অকেজো।

এছাড়াও কার্যক্রম পরিচালনার সময় সন্তোষজনক ২০ শতাংশ, অসন্তোষজনক ৩৭ শতাংশ ও নগণ্য ৪৩ শতাংশ। অবকাঠমোগত উন্নয়নে সন্তুষ্টি ৮ শতাংশ, অসন্তোষ ৩০ শতাংশ ও নগণ্য ৬২ শতাংশ। আইন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সন্তোষ ২৭ শতাংশ, অসন্তোষ ৪৭ শতাংশ ও নগণ্য ২৬ শতাংশ। উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবহারে সন্তুষ্টি ১০ শতাংশ, অসন্তোষ ২০ শতাংশ এবং  নগণ্য ৭০ শতাংশ। দক্ষ জনশক্তিতে সন্তুষ্টি ২২ শতাংশ, অসন্তোষ ৪৮ শতাংশ ও নগণ্য ৩০ শতাংশ। সামাজিক ও স্থানীয় পরিবেশ সন্তোষজনক ১৩ শতাংশ, অসন্তোষজনক ৬৪ শতাংশ ও নগণ্য ২৩ শতাংশ। অন্যান্য সুবিধা সন্তোষজনক ২৬ শতাংশ, অসন্তোষজনক ৩২ শতাংশ ও নগণ্য ৪২ শতাংশ।

এসব সমস্যা সমাধানে পেট্রাপোলগামী রাস্তা প্রশস্তকরণ, পণ্য খালাসে সময় কমানো, গুদামঘরের সংখ্যাবৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে সানেম।

এদিকে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরটিও সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে না। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালু রাখার কথা থাকলেও কার্যক্রম চলে সকাল থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। বনগাঁও থেকে পেট্রাপোল আসতে প্রতিটি ট্রাকের সময় লাগছে গড়ে ১৭ দিন।

পেট্রাপোলের উপর পরিচালিত গবেষণায় সানেম বলছে, কার্যক্রম পরিচালনার সময় সন্তুষ্টি ১৮ শতাংশ, অসন্তুষ্টি ৩৬ শতাংশ ও নগণ্য ৪৬ শতাংশ। অবকাঠমোগত উন্নয়নে সন্তুষ্টি ৪৩ শতাংশ, অসন্তোষ ৩৭ শতাংশ ও নগণ্য ২০ শতাংশ। আইন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সন্তোষ ২৭শ তাংশ, অসন্তোষ ৪৫ শতাংশ ও নগণ্য ২৮ শতাংশ।

উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবহারে সন্তুষ্টি ২২ শতাংশ, অসন্তোষ ৪৫ শতাংশ ও  নগণ্য ৩৩ শতাংশ। দক্ষ জনশক্তিতে সন্তুষ্টি ১৩ শতাংশ, অসন্তোষ ৪০ শতাংশ ও নগণ্য ৪৭ শতাংশ। সামাজিক ও স্থানীয় পরিবেশ সন্তোষজনক ৯ শতাংশ, অসন্তোষজনক ২৬ শতাংশ ও নগণ্য ৬৫ শতাংশ। অন্যান্য সুবিধা সন্তোষজনক ৪১ শতাংশ, অসন্তোষজনক ৫২ শতাংশ ও নগণ্য ৭ শতাংশ।

পেট্রাপোলের এসব সমস্যা সমাধানে সানেম আইসিপিতে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছে। এজন্য জনবলের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা জরুরি। অন্যসব সুপারিশের মধ্যে আছে বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে নীতি নির্ধারণী পরামর্শ দেওয়া, রাস্তা প্রশস্তকরণ ও নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং সামাজিক ও স্থানীয় বাধাগুলো চিহ্নিত করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদবাজি বন্ধের ব্যবস্থা করা।

এসময় সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী নাজমুল অভি হোসেন, গবেষণা-সহযোগী জাহিদ ইবনে জালাল ও সাদত আনোয়ারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়:১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।