ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সামর্থ্য বোঝার মাপকাঠি ফার্নিচার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
‘সামর্থ্য বোঝার মাপকাঠি ফার্নিচার’ আইসিসিবিতে ফার্নিচার মেলার একটি স্টল

ঢাকা: দেশের অন্যতম ফার্নিচার ব্রান্ড হাতিল! প্রসিদ্ধ এ ব্যান্ডের আলমারি, খাট, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রোব, শোকেস, সেন্ট্রাল টেবিল-যাই বলেন না কেন দামটা কিন্তু আকাশ ছোঁয়া। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা কেনা সম্ভব না।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান সৌরভ।

নতুন ঘরপাতা সৌরভ ছুটির দিনে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন আইসিসিবির জাতীয় ফার্নিচার মেলায় ফার্নিচার কিনতে।

বৃষ্টিভেজা দিনে অনেকটা নিরাশ হয়েই ফিরে যাচ্ছেন তিনি। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে না পেরে ফার্নিচারের অর্ডার না দিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাদের!

ফার্নিচার দেখতে, না কিনতে এসেছেন? বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে সৌরভ বলেন, বাসা তো পেছনেই (খিলক্ষেত), ভাবলাম ফার্নিচার দেখে আসি, ভালো লাগলে অর্ডারও দেব। কিন্তু দাম দেখে চক্কর খাওয়ার মতো অবস্থা।

পাঁচ দিনের জন্য আয়োজিত এ মেলার শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ছিল চতুর্থ দিন। বৃষ্টির কারণে, শুক্রবার সকালে মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থী ছিল কম। তবে বিকেল নাগাদ আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন মেলায় আসতে থাকে। বিশেষ করে যারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন তারা ছুটির দিনটা কাজে লাগাতে মেলায় এসেছেন।

তবে ব্যাংক কর্মকর্তা সৌরভের মতো বেশিরভাগ ক্রেতা ও দর্শনার্থীর মতামত হচ্ছে- ফার্নিচারের দাম মধ্যবিত্তের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। উচ্চ মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান লোক ছাড়া মেলায় অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলো থেকে ফার্নিচার কেনা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

অবশ্য আয়োজকরা এ মতামত মানতে নারাজ। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের এ মতামতকে উড়িয়ে দিয়ে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের মাথাপিছু আয়, আর্থ সামাজিক অবস্থা, সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো- সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই ফার্নিচারের দাম নির্ধারণ করা হয়।

তাদের মতে, মানুষের সামর্থ্য দিন দিন বাড়ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র উৎপাদনে গিয়ে কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের সামর্থে্যর কথা সবার আগে মাথায় রাখে। মানুষের হাতে পণ্য পৌঁছাতে না পারলে তো উৎপাদনে যাবে না কেউ।

কথা হয় ‘হাইটেক’ এর ম্যানেজার শাহরিয়ার শরিফের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন- পাঁচ বছর আগে প্রতি মাসে যে পরিমাণ প্রোডাক্ট সেল হতো, এখন তার পাঁচগুণ সেল হয়। অথচ এই পাঁচ বছরে দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশের মতো। সুতরাং মূল্য বৃদ্ধি যদি কোনো ফ্যাক্ট হতো, তাহলে বিক্রির পরিমাণ বাড়ত না। দাম যেমন বেড়েছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও চাহিদাও বেড়েছে।

মেলায় ছাড়ের ছড়াছড়ি:

এদিকে মেলা উপলক্ষে ফার্নিচার উৎপাদনকারী সব কোম্পানিই তাদের পণ্যে ছাড় দিয়েছে। কোনো কোম্পানি ৫ শতাংশ, কেউ ১০ শতাংশ, কেউ আবার ১৫ শতাংশ, কেউ বা ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে।

পণ্যের ডিজাইন, ক্যাটাগরি, মান ও দামের ওপর এ ছাড় নির্ভর করছে। ‘নাদিয়া’ তাদের ফার্নিচারে ছাড় দিয়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। পারটেক্স দিয়েছে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। এলিগেন্ট দিয়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। মেলা চলাকালীন অর্ডার দিলেই এই ছাড় এর সুযোগ পাওয়া যাবে। ‘অর্ডার মানি’ জমা দিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারি নিলেও এই পাবেন ‘ছাড়’র সুযোগ।

এলিগেন্ট ফার্নিচারের হেড অব বিজনেস নুসরাত জাহান শামিমা বাংলানিউজকে বলেন- পণ্যের ডিজাইন, ক্যাটাগরি ও দামের ওপর ভিত্তি করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি আমরা। মেলা চলাকালীন অর্ডার দিলেই এই সুযোগ নিতে পারবেন ক্রেতারা। মাল ডেলিভারি যেদিন-ই নিন, সমস্যা নেই। অর্ডার দিতে হবে মেলা থাকতেই।

তবে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, এই ছাড় তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। কারণ, বৈশাখি ছাড়, বাণিজ্য মেলা উপলক্ষ্যে ছাড়, গ্রীষ্মকালীন ছাড়, শীতকালীন ছাড়, বর্ষশেষ ছাড়সহ সারা বছরই প্রায় ছাড় পাওয়া যায়। মূল বিষয় হচ্ছে দাম। সেদিকটায় নজর দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এজেড/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।