ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিলেটে ভ্যাট ফাঁকি রোধের উদ্যোগে নাখোশ হোটেল ব্যবসায়ীরা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
সিলেটে ভ্যাট ফাঁকি রোধের উদ্যোগে নাখোশ হোটেল ব্যবসায়ীরা

সিলেট: সিলেটে ভ্যাট ফাঁকি রোধে স্থানীয় ভ্যাট কমিশনারেটের উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় হোটেল ও গেস্টহাউজ ব্যবসায়ীরা।

তাদের অভিযোগ নির্ধারিত হারে ভ্যাট আদায় এবং পাস ওয়ার্ডসহ ই-মেইল ঠিকানা চেয়ে ব্যবসায়ীদের মামলার হুমকি দিচ্ছে ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট।

তবে স্থানীয় ভ্যাট কমিশনারেটের দাবি আইন মেনেই ভ্যাট ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

  এছাড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি ও গণশুনানি করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে ভ্যাট ফাঁকি রোধে স্থানীয় ভ্যাট কমিশনারেটের নানা উদ্যোগে বেশ নাখোশ স্থানীয় হোটেল ও গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ভ্যাট কমিশনারেটের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগও দিয়েছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে  ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজস্ব বোর্ড।

কর নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত আলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি সিলেটে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে। এছাড়া সিলেটে অবস্থানকালে তারা শুনানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন।   গত ১৫ নভেম্বর সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।  

শুনানিতে আইনি বেড়াজালে ফেলে মাসিক নির্ধারিত হারে ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দেওয়া, পাসওয়ার্ডসহ ইমেইল চাওয়া এবং প্রতিদিনের হিসাব দাখিল নিয়ে মোবাইল ফোনে কর্মকর্তাদের হুমকিরও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।  

ব্যবসায়ীদের অনেকে অভিযোগ করেন, ভ্যাট কর্মকর্তারা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলকে নির্ধারিত হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে চিঠি দেন, হুট করে এসে হিসাবের খাতা-পত্র নিয়ে যান। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাদের।

তারা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১১ ডিজিট থেকে ৯ ডিজিটের ব্যবসা সনাক্তকরণ সংখ্যা (বিআইএন) গ্রহণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই চিঠিতে চাওয়া হয় পাসওয়ার্ডসহ ই-মেইল। এছাড়া ৯ ডিজিটের বিন নাম্বার না থাকার কারণে শুল্ক কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হলে তার দায় ব্যবসায়ীদের বহন করতে হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট আহরণ করে দেন। কিন্ত ভ্যাট নির্ধারিত হারে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে হোটেল গেস্ট ওনার্স এসোসিয়েশন রাজস্ব বিভাগে অভিযোগ করায় গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করেছে। গণশুনানি করেছে।

সিলেট টার্গেটের উপরে ভ্যাট আহরিত হয় উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি বলেন, ভ্যাট দেয় ভোক্তারা। আমরা ব্যবসায়ীরা কেবল ভ্যাট আহরণ করে দেই। অথচ ভ্যাট আদায়ে কর্মকর্তারা সিস্টেমের বাইরে গিয়ে খাতা-পত্র নিয়ে যান, ব্যবহার খারাপ করেন।  তাতে মনে হয় সিলেটে ভ্যাট নিয়ে তুফান আরম্ভ হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার শফিকুল ইসলাম। বরং ভ্যাট আদায়ে গতি আনতে এবং ভ্যাট ফাঁকি রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নির্ধারিত হারে ভ্যাট চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা মনিটরিং করে একটি সার্ভে প্রতিবেদন দিয়েছিলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কি পরিমাণ ভ্যাট হওয়া উচিত। তাছাড়া প্রতিদিনের একটি হিসাবের জন্য খাতা চাওয়া হতে পারে।

ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণশুনানি হয়েছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, শুনানিতে কেউই অভিযোগ করেনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তও হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আরো বৈঠক করা হবে। তাদের বলেছি খাতাপত্রে রেকর্ড রাখতে। তাছাড়া ভ্যাট আদায় করতে হবে কিভাবে সে বিষয়ে আলোকপাত করিয়েছি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিলেটে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে উল্লেখ করে  ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ আহরিত হয়েছে বলে জানান ভ্যাট কমিশনার।  

তবে চিঠিতে পাসয়ার্ডসহ ই-মেইল চাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মিসটেক হয়েছে। পাসওয়ার্ড ও ইমেইল ভুল বশত চাওয়া হয়েছে। এটা লাগবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এনইউ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।