ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সৈয়দপুরের সোয়েটার যাচ্ছে বিশ্ববাজারে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
সৈয়দপুরের সোয়েটার যাচ্ছে বিশ্ববাজারে বিশ্বের বাজারে রফতানি হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সোয়েটার

নীলফামারী: ঝুট কাপড়ের পোশাকের পর এবার বিশ্বের বাজারে রফতানি হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার গরম কাপড়ের সোয়েটার। আরামদায়ক ও রকমারি ডিজাইনের উন্নতমানের এ শীতের পোশাকটির কদর বেড়েছে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায়। 

বছরে ৩০ কোটি টাকার সোয়েটার রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এতে যেমন কারিগররা হচ্ছেন স্বনির্ভর, তেমনি এ উপজেলা শহরেও তৈরি পোশাক শিল্পের অপার সম্ভাবনা জেগেছে।

 

সূত্র মতে, ২০১২ সালে শহরের মিস্ত্রিপাড়া এলাকার ডিমলা ভবনে ঢাকার বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান রফতানিমুখী আমির সোয়েটার অ্যান্ড অ্যাপারেলস্‌ লিমিটেড স্থাপন করেন। শুরুতে ইপিজেডের বঞ্চিত ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা এ কারখানায় সোয়েটার তৈরি করতেন। পরে স্থানীয় দরিদ্র কলেজ শিক্ষার্থী, গৃহবধূ ও গ্রামের বেকার যুবকদের দুই-এক মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। উৎপাদনের শর্তে আয় অনুসারে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক এখন কাজ করছেন এ গার্মেন্টেসে।  

সরেজমিনে জানা গেছে, বর্তমানে কারখানাটিতে নিটিংয়ে ২০০ জন ও মেশিনে ১০০ জন, লিংকিংয়ে ৪০ জন ও মেশিনে ৩০ জন, ট্রিমিংয়ে ২০ জন এবং হোল্ডিং অপারেটর পদে ৩৫ জন কর্মরত। তারা প্রত্যেকে উৎপাদন অনুসারে মাসে ৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।  

গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানান, এখানে প্রতিদিন শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকাররা কাজের সন্ধানে আসেন। বাড়তি মেশিন না থাকায় এবং স্থানের সংকুলান না হওয়ায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব যাচ্ছে না। তবে আগামীতে এ কারখানায় আরও মেশিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।  
বিশ্ববাজারে যাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের সোয়েটার কর্মরত নারী শ্রমিকরা জানান, আগে তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। এখানে কাজ নেওয়ার পর স্বচ্ছলতা এসেছে। কেউ কেউ জানান, এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছে তাদের।  

লিংকিং মেশিনে কাজ করা কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আগে গুলের কারখানায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতাম। এখন সুস্থ পরিবেশে কাজ করে ভালোই আছি। যা পাই, তা দিয়ে বাবা-মাসহ পরিবারের খরচ ও কারো কারো পড়ালেখার খরচও চলছে’।  

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘আমরা যে মজুরি দেই, তা সারা দেশের গার্মেন্টসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেওয়া হচ্ছে। এ সকল কর্মঠ শ্রমিকের সুনিপুণ গাঁথুনির সোয়েটার এখন এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় যাচ্ছে। প্রতি বছর বায়ারের মাধ্যমে মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডা ও ফ্রান্সে ৩০ কোটি টাকার এ পণ্য রফতানি হচ্ছে’।  

‘চাহিদা অনুসারে প্রতিদিন বিভিন্ন মডেলের ৪০০-৫০০ পিস সোয়েটার তৈরি হচ্ছে। সূতা, পরিবহন, ওয়াশ, আয়রন, প্যাকিং, পলি, লেবেল ও কার্টন করাসহ শ্রমিক খরচ মিলিয়ে প্রতি পিস পোশাকের উৎপাদন ব্যয় ৪০০-৫০০ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ ডলার দরে। এতে মালিকপক্ষসহ শ্রমিকরাও নিজেদের স্বছলতা ফিরিয়েছেন’।  

ঝুট কাপড়ের তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরাও বলেন, ‘৫ শতাধিক কারখানায় উৎপাদিত জ্যাকেট, সোয়েটার, জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট আমরা রফতানি করছি ভারত, বার্মা, নেপাল ও ভুটানে। তবে বায়ারের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোতেও এ সকল পোশাক রফতানি করা গেলে আরো প্রসারিত হতো এ শিল্প’।  

রফতানিকারক মতিয়ার রহমান দুলু বলেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এখন বিদেশেও সোয়েটার রফতানি করছি। সরকারসহ অন্য ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শহরেই একদিন তৈরি পোশাক শিল্পের বিপ্লব ঘটবে’।  

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এএসআর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।