ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালান ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মাছচাষীরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
চালান ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মাছচাষীরা! অভিনব উপায়ে মাছ জীবিত রাখতে মরিয়া মাছচাষীরা; ছবি ও ভিডিও: আরিফ জাহান

সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: পিকআপ ভ্যানের কেবিনের ওপরের ঠিক পেছনটায় একটি ছোট আকারের শ্যালোমেশিন। বডির দু’পাশের ও পেছনের ঢালাটা কিছুটা উঁচু করে বানানো। ভেতরে চার কোনাকৃতি করে ত্রিপল-ঘেরা। তার ওপর মোটা আকারের কালো পলিথিন বিছানো। দেখতে অনেকটা ছোট আকারের পুকুরের মত।

মাছ ওঠানোর আগে পিকআপ ভ্যানের বডির ভেতরে বানানো সেই পুকুর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভরে নেওয়া হয়। এরপর জালে ওঠা মাছগুলো গুণে গুণে গাড়িতে উঠানো হয়।

তারপর চালু করা হয় সেই শ্যালো মেশিন। মেশিনের একটা পাইপ নামানো থাকে বডির ভেতরে বানানো পুকুরে। সেই পুকুর থেকে পানি উঠিয়ে ওই পুকুরে ফেলা হয়।
 
নির্দিষ্ট গন্তব্য মানে আড়তে আসা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। মাছ বিক্রির আগ পর্যন্ত মেশিন চালু থাকে। বিক্রি শুরু হওয়ার আগে মেশিন দিয়ে পানি ফেলে দেওয়া হয়। এরপর নির্ধারিত বাসনে ভরে জ্যান্ত মাছ পাল্লায় উঠানো হয়। শুরু হয় মাছ বিকিকিনি। মাছের দাম কেজিতে মাত্র ২০-৩০ টাকা বেশি পেতে এতো আয়োজন।
 
এভাবে নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে পিকআপ ভ্যানে ভরে জ্যান্ত মাছ বিক্রি করতে সিরাজগঞ্জ আড়তে আসেন চাষী মো. আদম আলী ও আবু বকর। আরো আসেন রাজশাহীর বানেশ্বরের মকবুল হোসেন, কাটাখালির এরশাদ হোসেন, রামগাতির মো. ইসরাফিলসহ একাধিক মাছচাষি।
 
মো. আদম আলী ও আবু বকর বাংলানিউজকে জানান, তারা কাতল, রুই, মৃগেল, সিলভার কার্প, বিগহেড প্রজাতির বাংলা (স্থানীয় ভাষায়) মাছ চাষ করে থাকেন। মাছ পুকুরে ছেড়ে দেওয়ার মোটামুটি ৮-৯ মাসের মাথায় বিক্রির জন্য সেই মাছ তোলা হয়। প্রায় ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছ তারা পুকুরে ছাড়েন। বিক্রির সময় এসব মাছ জাতভেদে আড়াই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। অবশ্য একেক অঞ্চলের চাষিরা একেক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন।
 
তারা জানান, বাজারে সব সময় জ্যান্ত মাছের আলাদা চাহিদা রয়েছে। এরপরও দীর্ঘ ব্যবসা-জীবনে কখনও এত কম দামে মাছ বিক্রি করতে হয়নি। একটি দুই থেকে তিন কেজি ওজনের রুই মাছ কেজিতে গতবছরের চেয়ে কমপক্ষে ৭০-১০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এই ওজনের একটি মাছ বর্তমানে আড়তে পাইকারি দরে প্রতিকেজি ২২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকায় বিক্রি করা যায়। দামের ক্ষেত্রে অন্য প্রজাতির বাংলা মাছের বেলায়ও একই চিত্র।
 
আর সেই মাছটি মরে গেলে প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। এমনিতেই ব্যবসাতে দীর্ঘ সময় ধরে মন্দাভাব যাচ্ছে, তার মধ্যে আবার মরে গেলে দাম যায় আরও কমে যাবে। সব মিলিয়ে লাভ নয়, মূল চালান ওঠাতেই কত কৌশলই না করতে হচ্ছে বাংলা মাছের চাষিদের’ -যোগ করেন এই দুই  মাছচাষী।
 
তবে মন্দা বাজারের মধ্যে বাংলাসহ পাবদা, গোলসা, শিং, মাগুর মাছের চাষীরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া (মনোসেক্স) চাষিরা করুণ দশায় পড়েছেন। পুকুর ভাঙলেই আয়তন ভেদে বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান গুণতে হয় তাদের।
 
মাছচাষী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে তিনি ১৬ হাজারের মত পাঙ্গাস মাছ চাষ করেছেন। গড়ে প্রত্যেকটি মাছের ওজন প্রায় এক কেজি করে। এই সংখ্যক মাছের শুধু খাবারের পেছনেই প্রায় ১৮ লাখ টাকার মত ব্যয় করতে হয়েছে।

অথচ এই ওজনের প্রতিকেজি মাছ মাত্র ৬০-৬৫ টাকা দরে আড়তে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে খাবারের দাম দিন দিন বেড়ে চলছে। এই বাজারদর অব্যাহত থাকলে মাছচাষীদের এক সময় পথে বসতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই চাষী।

 তাই বিশাল সম্ভাবনাময় মৎস্যখাতকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান এসব মাছচাষী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।