ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০৫০ সালে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি হবে!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৭
২০৫০ সালে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি হবে! বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠান/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সাগরে যেভাবে প্লাস্টিক বোতল ফেলা হচ্ছে তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ ৮১২ মেট্রিক টনে গিয়ে দাঁড়াবে। আর দূষণ এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি হবে।

বিশ্বব্যাপী সাগরে বর্তমানে ১৫০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য রয়েছে, আর মাছ আছে ৮১২ মেট্রিক টন। ২০৫০ সালে এটি উল্টো হবে।

 

নদী নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকা এবং সাগরের ব্যবহার করতে না পারায় এমন দূষণ হচ্ছে। অথচ নদীর তুলনায় সাগরের দৈর্ঘ্য ১শ কিলোমিটার বেশি।  

শনিবার (০৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ‘ব্লু -ইকোনোমি: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিভাগের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়াল এডমিরাল খোরশেদ আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নদী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমরা সাগরের ব্যবহার করতে পারিনি। অথচ খাল-বিলের পরিমাণ মাত্র ১৮ হাজার কিলোমিটার। যেখানে সাগরে পরিমাণ ১ লাখ ১৮ কিলোমিটার। তাই এখনো সময় আছে সাগরের যথাযথ ব্যবহার করার।
 
খোরশেদ আলম বলেন, উপকূল থেকে সমুদ্রসীমার দৈর্ঘ্য ৬৬০ কিলোমিটার, গভীরতা প্রায় আড়াইহাজার কিলোমিটার। এখানে প্রায় ২৬টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলো ব্লু -ইকোনোমির অর্ন্তভূক্ত। যেখানে সাগরের সাহায্য নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। সমুদ্র অর্থনীতি থেকে বছরে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। এর মধ্যে খাবার, এনার্জি, পরিবহন, মিনারেল ওয়াটার, পর্যটনসহ আরও বেশ কয়েকটি খাত থেকে এ আয় আসে।  
 
খোরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশের ট্রলারগুলো উপকূল থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরে। ৬৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ৬০-৭০ কিলোমিটার। বাকি ৬শ কিলোমিটারে মাছ ধরতে প্রণোদনার মাধ্যমে গভীর সমদ্র থেকে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গত বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ মিলে ৮০ লাখ টন মাছ ধরেছে। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ৯৫ হাজার টন।
 
তিনি বলেন, বিশ্বে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে ২০৫০ সালে তা ৯ বিলিয়ন হবে। এ বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য আর প্রায় ১শ মিলিয়ন টন মাছ লাগবে। বর্তমান বিশ্বে ১৬০ মিলিয়ন টন মাছ ধরা। মোট ২৬০ মিলিয়ন টন মাছ লাগবে। খাদ্য ও প্রোটিনের জন্য ২০৫০ সালে আরও ১শ মিলিয়ন টন মাছ লাগবে। আমরা যদি সাগর থেকে ১০ বা ৫ মিলিয়ন টন মাছ ধরে বিক্রি করতে পারি, তাহলে দেশের স্বার্থে ব্যবহার হবে। বিভিন্ন দেশ বড় বড় মাছ বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করছে। আমাদের দেশে মাছের শুঁটকি ছাড়া অন্য কিছু করা হয় না।
 
মাছ ও গাছ থেকে ওষুধ এবং খাদ্য তৈরি বায়ো টেকনোলজি ব্লু ইকোনোমিতে একটি বড় খাত। কিন্তু আমরা শুঁটকি ছাড়া আর কোনো কিছু এখান থেকে করিনা।

মেরিন জেনেটিক রিসোর্স সর্ম্পকে মানুষের ধারণা নাই। থাকলে সাগরের ৬ হাজার ফুট নিচে যেসব জীব জীবাণু বেঁচে থাকে সেসব দিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। আমরা সবগুলো করতে না পারলেও দু-একটা চেষ্টা করতে পারি।  

খোরশেদ আলম বলেন, পৃথিবিতে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন মালামাল সাগরপথে একদেশ থেকে অন্য দেশে আনা নেওয়া করা হয়। প্রায় লক্ষাধিক মার্চেন্টশিপ এগুলো করে থাকে। গত বছর আমাদের আমদানি রফতানি ছিল ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এর জন্য বিদেশি জাহাজ এসেছিল ২ হাজার ৬শটি। এসব জাহাজের ভাড়া দেওয়া হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের জাহাজ না থাকায় এ ভাড়া দিতে হয়েছে। শিপিং করপোরেশনের জাহাজ নাই। বেসরকারিখাতে জাহাজের সংখ্যা মাত্র ৪০টি। নিয়মানুযায়ী এসব আমদানি-রফতানির ৪০ শতাংশ নিজেরাই করতে পারি। করা গেলে ৫ বিলিয়ন ডলার দেশে থেকে যেত। যা জিডিপিতে বড় পরিবর্তন আনতো।  

যে হারে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে সে তুলনায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা নদী বন্দর ছাড়া আর গভীর সমুদ্রবন্দর নাই। গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়িতে করার কথা চলছে। পানগাঁও বন্দর হলেও জাহাজ না থাকায় নদীপথে কন্টেইনার বহন করা যাচ্ছে না।  
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সেলিমা খাতুন, র‌্যাংগস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ চৌধুরী, এসিআই ফার্টিলাইজারের নির্বাহী পরিচালক (অ্যাগ্রো) ড. এফএইচ আনসারী প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।