ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালান কমে দাম বেড়েছে দেশি ফলের! 

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৮
চালান কমে দাম বেড়েছে দেশি ফলের!  বাদামতলীর আড়তে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পেয়ারা ও কুল- ছবি- সুমন শেখ

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় বাজারে চালান কমেছে দেশি ফলের। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে কয়েকগুন। সবশেষ বাজার দর অনুযায়ী, ৩-৪ ধরনের দেশি ফলের দাম বিগত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বাদামতলীর ফলের আড়ৎ ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

দেশি ফলের সবশেষ পাইকারি বাজার দর অনুযায়ী, উন্নতমানের নারিকেল কুল কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, বাউকুল ৬০-২০ টাকা, টক কুল ৪৫ টাকা, দেশি পেয়ারা ৬০ টাকা ও সবেদা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া শবরী কলা প্রতি ফনা ৪০০ টাকা ও চাম্পা কলা প্রতি ফনা ২০০ টাকা এবং বরিশালের ডাব প্রতি পিস ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিটি ফলের কেজিতে দাম বেড়েছে ২৫-৫০ টাকা করে। এছাড়া কলা ও ডাবের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকা।

দেশি ফলের বাড়তি দাম সম্পর্কে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমত শীতের তীব্রতার কারণে রাজধানীতে ফলের চালান কম আসছে। দ্বিতীয়ত রাজশাহী ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কুল ও পেয়ারা চাষ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ দুই কারণ মিলিয়ে বাজারে দেশি ফলের আমদানি অনেক কমেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেজন্য এসব ফলের দাম বেড়েছে।

বাদামতলীর ফলের আড়ৎতের বাউকুলের পাইকারি ব্যবসায়ী মোতালেব বাংলানিউজকে বলেন, জানুয়ারি মাসের এমন সময় ট্রাকে ট্রাকে কুল বাজারে আসতো। কিন্তু এখন রাত-দিন মিলিয়ে দুই ট্রাক কুলও আসে না। তাই ২০ টাকা কেজির বাউকুল ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।

আড়তে আসা কমলাতিনি বলেন, দাম বাড়তির কারণে আমাদের ক্রেতা কমে গেছে। এই শীতে মানুষ এমনিই ফল কম খায়, এর মধ্যে যদি দাম বেশি থাকে তা হলেতো আরও সমস্যা।

পেয়ারার পাইকারি বিক্রেতা মিজান বাংলানিউজকে বলেন, দাম কিছুটা বাড়তি। যদিও পেয়ারা এখন ১২ মাসি ফল। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে ফলন কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেশি।

এদিকে বরিশাল থেকে ডাব নিয়ে আসা বিক্রেতা তৈমুর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। রাজধানীতে ভাসমান দোকান উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ডাব ঠেলাগাড়ির ভাসমান দোকানে বিক্রি হয়। ফলে আমাদের বেচাকেনা কমে গেছে।

তবে এই পাইকারি আড়ৎতে আসা খুচরা বাজারের বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।

তারা অভিযোগ করে বলছেন, পাইকারি ফলের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজেরা ইচ্ছা করে চালান কম এনে এই অবস্থা সৃষ্টি করছে। যাতে করে যোগানের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।

রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী সুজন অভিযোগ করে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। বৃষ্টিপাতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পেয়ারা ও বাউকুল চাষের। কিন্তু দাম এতো বেশি  হওয়ার মতো হয়নি। তারা সিন্ডিকেট করে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফার্মগেটের আরেক ফল বিক্রেতা জীবন বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছে। আজ আর পেয়ারা ও কুল নেবো না। আমরা না নিলে যখন ফল নষ্ট হবে তখন তর তর করে দাম কমাবে। আর দুইদিন বাদে কিনতে আমু।

তবে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দাবি করেছে, ফলের বাজারের অবস্থা সপ্তাহখানেক পরেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিভিন্ন কারণে চালান কমে যাওয়ার বিষয়টি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫,২০১৮
এমএসি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।