ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক চরমে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক চরমে ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যেখানে চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মঙ্গলবার (০৩ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) তথ্য প্রকাশ করেন।

চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় আগের বছরের চেয়ে ১৪২ ডলার বেড়ে ১ হাজার ৭৫২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এরপর থেকেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। বিবিএস এর দেয়া তথ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে নানা সংস্থা। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক(এডিবি) ও অর্থনীতিবিদেরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সোমবার (০৯ এপ্রিল) শেরে বাংলা নগরে বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৮’ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ।  

সংস্থাটি বলছে, বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫ অথবা ৬.৬ শতাংশ। আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ এবং কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। আয় ও কর্মসস্থানের প্রবৃদ্ধির চিত্র যদি এমন হয় তবে বছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে না।

বিবিএসএর তথ্যে দ্বিমত পোষণ করে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবিএস-কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসলে এর সমপর্যায়ে কেউ নেই। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য তারা দিয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ও প্রশ্ন আছে।  

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বিবিএস সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না, বিষয়টা এমন নয়। এটা ব্যতিক্রর্মী প্রবৃদ্ধি, আগামীতে এই নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেইভাবে কর্মসংস্থান বাড়েনি। চলতি বছরে শহরগুলোতে তিন লাখ দরিদ্র বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে হওয়ার কথা তা হয়নি। ’

এর পরে বিবিএস ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলো এডিবি। সংস্থাটি বলছে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি)প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে ।

বুধবার (১১ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে এডিবির কার্যালয়ে এডিবি’র ‘এশিয়ান ডেভল্পমেন্ট আউটলু্ক ২০১৮’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বিবিএস ও বিশ্বব্যাংক জিডিপি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফিগার দেয়া প্রসঙ্গে এডিবি’র ঢাকা অফিসের আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশ বলেন, একেক সংস্থা একেক ধরণের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে তথ্য দিতেই পার। সবার পারসেপশন এক নয়। তবে  বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধিতে ভালো করেছে। গত তিন বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে এটা কম অর্জন নয়। ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ১, ২০১৭ সালে ৭ দশমিক ৩ এবং ২০১৮ সালের শেষে ৭ শতাংশ অর্জন অনেক ভালো। এটা ধরে রাখা কম অর্জন নয়।
 
সরকারের দেয়া প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি দ্বিমত পোষণ করেছে। এতে করে ক্ষুব্ধ সরকার।
 
বুধবার (১১ এপ্রিল) শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠান করেন  পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি তথ্য নিয়ে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ।
 
এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের অবস্থান প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের কাছে সব তথ্য নেই। তাদের কাছে মাত্র পাঁচ মাসের তথ্য রয়েছে। জিডিপি নিয়ে আমরা যে ফিগারটা জানিয়েছি সেটাই সঠিক। একাজে আমরা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সহায়তায় নিয়েছি।
 
এডিবি ও  বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বিবিএস-এর কাছে যান। বিবিএস হচ্ছে ফাইনাল অথোরিটি। আমি বিশ্বস করি, আমাদের তথ্য সঠিক। এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের উচিত আমাদের তথ্য বিশ্বাস করা। তারা প্রথমে আমাদের কথা মানতে চান না, তবে বছরশেষে ঠিকই মানেন।  আমি জোর দিয়ে বলছি বছর শেষে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
 
বিবিএস এর দেয়া প্রবৃদ্ধির হিসেবের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদেরা।
 
সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বছর শেষে ৭ দশমিক ৬৫ প্রবৃদ্ধি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। কৃষি, সেবা ও শিল্পের উপর ভিত্তি করেই প্রবৃদ্ধি। গতবছর এই তিনটি খাত নিয়ে বিবিএস যে হিসাব দিয়েছে তা নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র দূর করার একটা সম্পর্ক আছে। যেভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেইভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে না; এমনকি দারিদ্রও কমছে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।