ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অনিশ্চয়তায় বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
অনিশ্চয়তায় বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ায় লেগে থাকা মাংস ছাড়াচ্ছেন এক শ্রমিক | ফাইল ছবি

বরিশাল: কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা। পুঁজি সংকটের কারণে এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। পুজি সংকট নিরসন হবে কি না তা যেমন অনিশ্চিত তেমনি স্থানীয় ব্যাপারীরা চামড়া আদৌ কিনবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

তবে কোরবানির আগে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে দাবি করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে নির্ধারিত চামড়ার দর না বাড়ালে দেশের বাইরে পাচারের শংঙ্কাও করছেন তারা।

১ যুগ আগে ২০ জন চামড়া ব্যবসায়ী থাকলেও বর্তমানে ৫ জন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে বরিশাল নগরের চামড়া ব্যবসা। এই ৫ জন ব্যবসায়ী নিজেদের পুঁজি খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। তাদের হিসেব মতে কোরবানি ছাড়া বরিশাল থেকে বছরে ৩৬ হাজার চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে যায়। আর কোরবানিতে বরিশাল থেকে ৩০ হাজার চামড়া ট্যানারিতে পাঠানো হয় এ ৫ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। তাদের এবারের টার্গেট ৩৫ হাজার চামড়া।

তবে বিগত ৩ বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে থাকা চামড়ার বকেয়া মূল্য না পেলে এ টার্গেট হয় কাগজে-কলমে থেকে যাবে, নয়তো মাঠ পর্যায় থেকেও বাকিতে ক্রয় করবেন বরিশালে ব্যবসায়ীরা।

বরিশাল নগরের পদ্মাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মো. নাছির বলেন, তিন বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার টাকা আটকে আছে। তারা ঢাকায় বসে পরিশোধের কথা বললেও বাস্তবে আমরা পাইনি। আর এদিকে আমরা দেনাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি। অনেকের চামড়ার টাকা তো ১ মাস পর দেয়ার কথা বলে ১ বছরেও দিতে পারিনি।

তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ট্যানারি মালিকরা তাদের ব্যবসার জন্য ঋণ পাচ্ছেন, টাকা নেই অথচ বাড়ি-ঘর তুলছেন, অন্য ব্যবসায় পুঁজি খাটাচ্ছেন। আমরা চাই সরকার কোম্পানি, আড়তদার ও ব্যাপারীদের নিয়ে বসুক, তাহলেই বের হয়ে যাবে আসল দোষী কারা। কারা এ ব্যবসার শৃঙ্খলা ধ্বংস করছে।

চামড়ার রেট কমানোকে ট্যানারি মালিকদের কারসাজি উল্লেখ করে নাছির বলেন, যদি কমপ্লিট অর্থাৎ লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দর ৩৫ টাকা ধরা হয়, তবে ২০ বর্গফুট চামড়ার দর আসে ৭শ’ টাকা। শ্রমিকের মজুরি, লবণ ও যোগাযোগসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় করে ওই চামড়ার পেছনে যদি ৪শ’ টাকা খরচ হয়, তবে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দেব কতো আর বিক্রেতারা পাবেন কতো?

তিনি বলেন, কোরবানির আগেই প্রতিবারের মতো লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েকমাস আগেও যেমন ৭৪ কেজির বস্তার লবণের দর ছিলো ৯শ’ টাকা তা এখন ১২শ’ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। পাশের দেশ ভারতে আমাদের থেকে চামড়ার দাম চড়া রয়েছে, তাই দেশের ভেতরে এ রকম মূল্য চললে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।  

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির শহিদুর রহমান শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া আদৌ বরিশালের ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নই। তিন বছর ধরে ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা দেনাগ্রস্ত হয়ে আছেন। মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীদের টাকা দিতে পারছেন না। নতুন করে দেনাগ্রস্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই!

আগামীকাল ঢাকায় যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল ঢাকায় কয়েকজন ব্যবসায়ী যাচ্ছি। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা কী বলেন বা আমাদের জন্য কী করেন তা দেখার জন্য। তার ওপরে ভিত্তি করেই চামড়া কেনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।