ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পানি দূষণ-নাব্যতা সংকটে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
পানি দূষণ-নাব্যতা সংকটে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম ইলিশ মাছ

চাঁদপুর: নদীর নাব্যতা সংকট ও পানি দূষণের কারণে ইলিশের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ উৎপাদন কমেছে। 

২০১৭ সালের এ সময়ে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদন কমে তা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার মেট্রিক টনে।

প্রায় অর্ধেক কমেছে ইলিশের উৎপাদন। বর্তমান ইলিশ মৌসুমেও ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার নদী উপকূলীয় চার উপজেলার মৎস্য আড়ৎগুলো। আর এর প্রভাব পড়ছে জেলে, মৎস্য ঘাটের শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর। তবে হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ দিয়ে কিছুটা হলেও সরগরম রয়েছে শহরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়ৎ।

মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মৎস্য পাড়া, আড়ৎদার, দাদনদার, জেলে নেতা ও জেলেদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও ইলিশ নেই। জেলেরা দিনে ও রাতে মেঘনা চষে বেড়ালেও খুব কম সংখ্যক ইলিশ পাচ্ছে। যাতে তাদের জ্বালানি খরচও উঠছে না। আর কিছু জেলে নিষিদ্ধ ও অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে ১০ ইঞ্চির কম ইলিশের পোনা জাটকা নিধন করছেন। আর এসব জাটকা এনে বিক্রি করছেন আড়ৎ এবং গ্রামের বাজারগুলোতে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। তারা ২০১৭ সালে চার উপজেলা থেকে ৩৫ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করে। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ১৬ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মতলব উত্তরে ২ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন, মতলব দক্ষিণে ১১১ মেট্রিক টন, হাইমচরে ৭ হাজার ৫২ মেট্রিক টন ও চাঁদপুর সদর ৬ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন।  

ট্রলার থেকে নামানো হচ্ছে ইলিশ।  ছবি: বাংলানিউজচাঁদপুর সদরের হরিণা ঘাটের জেলে সিরাজ সৈয়াল ও আখনের হাটের ইসমাইল জানান, বর্তমানে তাদের দুই ঘাটে প্রায় সাতশ’ জেলে রয়েছে। ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রতিদিনই একেক নৌকায় পাঁচ থেকে সাতজন করে নামেন। কয়েক ঘণ্টা নদীতে থেকে দুই থেকে তিন হালির বেশি ইলিশ পাচ্ছেন না। আর যা পাচ্ছেন তা সাইজে অনেক ছোট তিনশ’ থেকে চারশ’ গ্রাম। আর এসব ইলিশের হালি বিক্রি হয় ছয়শ’ থেকে সাতশ’ টাকা।  

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কালু বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা-মেঘনায় এখন ইলিশ নেই। এর কারণ হচ্ছে নদীতে নাব্যতা সংকট এবং পানি দূষণ। এ কারণে ইলিশ ভাটি থেকে উজানে আসছে না। বিচরণের জন্য পরিবেশ না পেলে ইলিশ কখনোই আসে না। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

সমিতির বর্তমান সহ-সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার জানান, হাতিয়া থেকে আসা ইলিশই আমাদের মৎস্য আড়তে বেশি আসছে। আর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনায় আহরিত ইলিশ আড়তে আসে। যার পরিমাণ খুবই কম এবং সাইজে ছোট। বর্তমানে হাতিয়া থেকে কিছু ইলিশ এ আড়তে আসছে। আর এসব ইলিশ আড়ৎদাররা দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা ইলিশ কম পাচ্ছে। তবে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার শুরুর আরো কয়েকদিন বাকি আছে, সে সময়ে বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ রক্ষায় সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।