ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উধাও হওয়া কয়লা ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
উধাও হওয়া কয়লা ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। ছবি: বাংলানিউজ ফাইল ফটো

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনির উধাও হওয়া ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লা ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তা অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। খনি পরিচালনা পর্ষদের ২৮৩ নম্বর সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়।
 

একই সঙ্গে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩.৪৩ টন কয়লা উদ্বৃত্ত হয়েছে বলেও পরিচালনা পর্ষদকে জানানো হয়।
 
জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে।

সে সময় থেকে চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২.৩৩ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে।  

এর মধ্যে খনি উন্নয়নকালীন (৯ সেপ্টেম্বর/২০০৫ পর্যন্ত) ১ লাখ ৭৮ হাজার ১৮০.৬০ টন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে ৫২ হাজার ৩৩৯.৭৪ টন, এয়ার রিটার্ণ রোডওয়ে থেকে ৮ হাজার ৬৩৫.০১ টন এবং ঠিকাদার কর্তৃক উৎপাদন ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৩.৫৫ টন সব মিলে উত্তোলন করা হয় ১ কোটি ১৩ হাজার ৫৯৮.৯০ টন কয়লা। অবশিষ্ট ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩.৪৩ টন কয়লা উদ্বৃত্ত।
 
এ সময়ের মধ্যে বিক্রি করা হয় পিডিবি’র কাছে ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৯.২৯ টন ও খোলা বাজারে ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০.৩৭ টন এবং খনির নিজস্ব ব্যবহার হয়েছে ১২ হাজার ৮৮.২৭ মেট্রিক টন কয়লা। মোট বিক্রয় ও ব্যবহার ১ কোটি ১৮ হাজার ৩৯৭.৯৩ টন।  

এছাড়া মজুদ পাওয়া যায় (১৯ জুলাই পর্যন্ত) আনুমানিক ৩ হাজার টন। বিক্রয়, ব্যবহার ও মজুদ একত্রে দাড়ায় ১ কোটি ২১ হাজার ৩৯৭.৯৩ টন।
 
সূত্রমতে, খনির উৎপাদন ঠিকাদার ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৫ থেকে ১১ আগস্ট ২০১১ পর্যন্ত ৭১ মাসে প্রথম দফা চুক্তিকালীন ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৩.৫৩ টন কয়লা উত্তোলন করে। ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত সারফেস কনভেয়র বেল্টে কয়লা পরিমাপের জন্য কোনো ওয়েইং স্কেল বসানো ছিল না। ওয়েইং স্কেল বসানোর আগে উৎপাদিত কয়লা ভু-গর্ভে ইনসিটু অবস্থার আয়তনকে (ফেইস মেজারমেন্ট) ১.৪৩ ঘনত্ব ধরে পরিমাপ করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়। এতে করে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩.৪৩ টন কয়লা উদ্বৃত্ত হয়। যা পরবর্তী সময়ে মজুদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
 
খনি কর্তৃপক্ষের দাবি, উদ্বৃত্ত ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩.৪৩ টন কয়লা যদি তারা চুরি বা আত্মসাত না করে থাকে যার উৎপাদন বিল পর্যন্ত ঠিকাদারকে প্রদান করতে হয়নি। তাহলে তার চেয়ে কম ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লা তারা চুরি করতে যাবে কেন। এটি আসলে সিস্টেম লস।
 
সূত্রমতে, খনির উৎপাদন, বিক্রয়, ব্যবহার ও মজুদের বাস্তব পরিমাপের আলোকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লাকে ঘাটতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এবং প্রতিটন কয়লার দাম ৭ হাজার ৮৩০ টাকা (উৎপাদন খরচ) হিসেবে মোট ১১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।  

খনির নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান এবং জেনারেল ম্যানেজার (মাইন অপারেশন) সাইফুল ইসলাম প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত খনি পরিচালনা পর্ষদের ২৮৩ নম্বর সভায় তা উপস্থাপন করেন।
 
গত জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বড়পুকুরিয়া খনির কোলইয়ার্ড পুরোপুরি খালি হলে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪.৪০ টন কয়লা ঘাটতির হিসাব বেরিয়ে আসে।
 
এদিকে, পেট্রোবাংলার প্রাক্তন পরিচালক (খনি ও খনিজ/পরিকল্পনা) খনি বিশেষজ্ঞ মকবুল-ই-ইলাহী বাংলানিউজকে জানান, উৎপাদন ও বিতরণ সম্পৃক্ত শিল্প-কারখানায় সিস্টেম লস যেমন অস্বীকার করা যায় না, ঠিক তেমনি বড়পুকুরিয়ায় উত্তোলিত কয়লার ক্ষেত্রেও সিস্টেম লস অস্বীকার করার উপায় নেই। জ্বালানি তেল, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ সব খাতে স্বীকৃত সিস্টেম লস আছে। তাহলে কয়লার থাকবে না কেন। ১৪ বছরে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ ঘাটতির যে হিসাব পাওয়া গেছে তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের খনির ঘাটতির তুলনায় খুবই কম। তবে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ কেন সিস্টেম লসের বিষয়টি মাথায় রাখল না। বোর্ড মিটিংয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে যদি ১.৫ শতাংশ সিস্টেম লসও ধরা হতো তবে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।