ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ কবুতর ব্যবসায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ কবুতর ব্যবসায় ব্যবসায়ী বাবুলের হাতে এলমন জাতের একটি কবুতর, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কবুতর বেচাকেনায় সকাল থেকেই জমজমাট চারপাশ। হাজারও মানুষের ভিড়। কেউ কেনায় ব্যস্ত, কেউ বিক্রিতে। ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সব মিলিয়ে যেনো ‘কবুতর হাটে’ রূপ নিয়েছে মিরপুর-১ নম্বরের একাংশ।

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর এক নম্বরে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতরের সমাহার। আর ক্রেতাদের ডাকছেন এসব প্রজাতির কবুতর নিয়ে বিক্রেতারা।

তাদের মধ্যে কেউ শখের কবুতর হাটে তুলেছেন, কেউ ব্যবসা করেই চলেন।

এলাকাটিতে ভোর থেকেই শুরু হয় কবুতর বেচাকেনা। বিকেল পর্যন্ত চলে প্রায় প্রতিদিনই।

ক্রেতাদের অনেকে বাসায় নানা ব্যবস্থায় কবুতর পুষেছেন। আবার অনেকের রয়েছে মিরপুর এলাকায় ছোট ছোট কবুতর খামার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কবুতর এখন শুধু শখ করে পোষা হয়না। ব্যবসায়ীক উদ্দেশেও পোষা হচ্ছে। আর দিন দিন বাড়ছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। কেননা, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হচ্ছে এ ব্যবসায়। আর এখন এটি লাভজনক ব্যবসাগুলোর মধ্যে একটি।
খাঁচায় বন্দি এক জোড়া কবুতর, ছবি: বাংলানিউজযেমনটি লাভ করে চলছেন মিরপুরের বাবুল মিয়া। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি কবুতর ব্যবসায় জড়িত। এক হাট থেকে পছন্দমতো কিনে অন্য হাটে বিক্রি করছেন কবুতর। সুবিধার জন্য একটি দোকানও রয়েছে তার। সেখানেও বেচাকেনা তেমে নেই কবুতরের।

মিরপুরের ওই দোকানটিতে বাবুল বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর তুলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল্যান্ডের জেকোবিন প্রজাতির এলমন কবুতর। যা এক জোড়া ছয় হাজার টাকা।

এ জাতের কবুতর সব সময় মাথার লোম ও পাখনা ময়ূরের মতো ছড়িয়ে রাখে। লোম দিয়ে চোখও ঢেকে রাখতে পছন্দ করে এরা।

এছাড়া প্রত্যেক কবুতরের রয়েছে রঙ আর জাতভেদে দামের পার্থক্য। এখানে পাওয়া যায় বুডারবল প্রজাতের এক জোড়া কবুতর চার হাজার টাকায়।

সেইসঙ্গে সিরাজি কবুতরের চাহিদা ব্যাপক। এ প্রজাতির সিলভার রঙের এক জোড়ার দাম সাত হাজার টাকা। এছাড়া সিরাজি লাল জাতের কবুতর জোড়া প্রতি দাম ছয় হাজার, সিরাজি কালো চার হাজার ৫০০, সিরাজি হলুদ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-১০ এর একাংশ যেনো কবুতরের হাট, ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে কবুতরের ব্যবসায় জড়িত। এক হাটে কবুতর কিনে অন্য হাটে বিক্রি করি। আমার কাছে সকল ধরনের কবুতর আছে। তবে এখন কবুতরের বাজার নিচের দিকে। শীত আসলে দাম বাড়বে। গরমে কবুতরের অনেক রোগ হয়, যেমন ডায়রিয়াই বেশি হয়। তবে স্যালাইন ও মাল্টিভিটামিন খাওয়ালে কবুতর সুস্থ থাকে। এছাড়া কবুতরের থাকার ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হয়।

বনানী থেকে কবুতর কিনতে মিরপুর এসেছেন কবির আহম্মেদ। তার দুই জোড়া এলমন আছে। আরও তিন জোড়া এলমন কিনতে চান।
 
এ বিষয়ে বাংলানিউজকে কবির বলেন, কবুতর পোষার শখ ছোটবেলা থেকেই। কবুতরের জন্য আমার ফ্ল্যাটের ছাদ বরাদ্দ। এখন দামও কম। তাছাড়া অনেক বিদেশি জাতের কবুতর দেশেও হচ্ছে।

কবুতরের খামারি এসএ আমিন জং বাংলানউজকে বলেন, এক সময় এক জোড়া শটপিচ কবুতরের দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকার উপরে। কিন্তু এখন চার হাজার টাকায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন এই জাতের কবুতর উৎপাদন করছে। দেশের কবুতর কখনও বিদেশে পাচার হয় না। যে কারণে কবুতরের দামও কম।
 
তিনি আরও বলেন, এক সময় জার্মান, হল্যান্ড ও পাকিস্তান থেকে প্রচুর বিদেশি কবুতর আসতো। ফলে দাম বেশি পড়তো। কিন্তু এখন দেশেই এসব কবুতর হচ্ছে। তবে ভারত থেকে কিছু কিছু কবুতর দেশে আসছে।

মিরপুরের লিয়ন খান। নিজের বাসার ছাদে ১০০ জোড়া কবুতর পোষেছেন। প্রতি জোড়া কবুতর মাসে ৬০ টাকার খাবার খায়। প্রতি মাসে এক জোড়া বাচ্চা দেয়। যা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এ হিসেবে ১০০ জোড়া কবুতর থেকে মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন লিয়ন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কবুতর পালায় কোনো ঝামেলা নেই। ১০০ জোড়া কবুতর থেকে মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। রমজান মাস ও ঈদের আগে বেচাকেনা বেড়ে যায়। ছয় মাস বয়সের পর থেকে প্রতি মাসেই এক জোড়া কবুতর বাচ্চা দেয়। আমি ইচ্ছে করলেই ১০০ জোড়ার বেশি কবুতর রাখতে পারবো না। প্রতি মাসেই কবুতর বিক্রি করতে হয়। অধিকাংশ সময় আমি অনলাইনেও কবুতর বিক্রি করি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।