ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমেছে বেগুনের গুণ, শঙ্কায় চাষিরা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
কমেছে বেগুনের গুণ, শঙ্কায় চাষিরা ক্ষেত থেকে তোলা বেগুন মাপা হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উৎপাদিত বেগুনের গুণ কমে গেছে, তাই লাভের খাতা শুন্যের আশঙ্কায় হাসি নেই লালমনিরহাটের সবজি চাষিদের মুখে। 

টানা খরার কবলে প্রকৃতিতে বৃষ্টির অভাবে ফলনও হয়েছে গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক কম। খরচ উঠলেও লাভবান হওয়ার কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছেন না বেগুনচাষিরা।

বিগত বছরে বন্যার কারণে অন্যান্য সবজি নষ্ট হওয়ায় সারাদেশে সবজি হিসেবে ব্যাপক কদর ছিল বেগুনের। ফলে লাভে লাল হয়েছিল এ অঞ্চলের বেগুনচাষিরা। কিন্তু এ বছর বন্যা না থাকায় অন্যান্য সবজিতে বাজার এখন ভরপুর তাই চাহিদা কমেছে বেগুনের। ফলে মুনাফাও কম পাচ্ছেন বেগুন চাষিরা।

চাষিরা জানান, বন্যাকালীন মানুষের সবজির চাহিদা পুরণে জুলাই-আগস্ট মাসে আষাঢ়ি বেগুনের চারা রোপণ করেন লালমনিরহাটের উঁচু এলাকার সবজি চাষিরা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বেগুন বাজারে উঠতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর বন্যা না হওয়ায় অন্যান্য সবজিতে বাজার ভরপুর তাই বেগুনের চাহিদা অনেকটাই কম। সেজন্য দামও কম।  

ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজগত বছর অক্টোবর মাসে প্রতিমণ বেগুন বিক্রি হয়েছিল দেড় হাজার টাকা দামে। এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪শ’ টাকা। দিন যতই যাবে অন্যান্য শীতকালীন সবজি এলে আরো কমে যাবে বেগুনের গুণ। ফলে উৎপাদন খরচ নিয়ে দুঃচিন্তায় বেগুনচাষিরা।  

জেলার সবজি চাষ খ্যাত আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আব্দুর নুর মাস্টার গত বছর তিন দোন (২৭ শতাংশে এক দোন) জমিতে বেগুন চাষ করে দেড়/দুই লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এ বছরও ওই জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করেছেন। এ বছর বৃষ্টি না থাকায় সেচ খরচ ও কীটনাশক খরচ বেড়ে গেলেও উৎপাদন কম হয়েছে। কমে গেছে বেগুনের বাজার মূল্য।  

চারদিন পরপর বেগুন তুলে পাচ্ছেন ১৫/১৬ মণ। যার শ্রমিক ও কীটনাশক খরচ যায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। একবার বেগুন তুললে পরদিন দুই হাজার টাকায় কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। একদিন বেগুন তুলতে শ্রমিক খরচ পড়ছে দেড় হাজার টাকা। সব মিলে উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত চাষি আব্দুর নুর।  

বস্তায় ভরে বেগুন নিয়ে আসছে শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজওই গ্রামের ইদ্রীস মিয়া ৫৪ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। তাই এ বছরও ওই জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করেছেন। এখনও সপ্তাহে প্রায় দুই দিন স্প্রে করছেন আড়াই হাজার টাকা খরচে। আর প্রতি সপ্তাহে দুই কিস্তিতে বেগুন পাচ্ছেন মাত্র ২০ মণ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ হাজার টাকা। খরচ উঠলেও লাভের খাতা শুন্য হওয়ার আশঙ্কা তার।  

তিনি বলেন, গত বছর দাম ভাল থাকায় মুনাফাও ভালই হয়েছে। এ বছর দামই নেই।  

শুধু আদিতমারীর কমলাবাড়ি নয়, সারপুকুর, ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সাপ্টিবাড়ি, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, হারাটি, মহেন্দ্রনগর, মোগলহাট, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ি, গোতামারী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর, চলবলা প্রভুতি এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ হয় বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।

এসব চাষিদের উৎপাদিত বেগুন প্রতিদিন ট্রাক ভরে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ সারা দেশে। এ সময় মৌসুমী সবজি ব্যবসায়ীদেরও আয়ের পথ খুলে যায়। তারা সারাদিন চাষিদের সবজি ক্ষেত থেকে কিনে ট্রাকে ভরে দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে পাঠায়। বছরে ৯ মাস চলে তাদের সবজি ব্যবসা।

বেগুনের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজআদিতমারী উপজেলার মৌসুমী সবজি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, নুর হোসেন ও সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তারা চাষিদের ক্ষেত থেকে সবজি কিনে ট্রাকে ভরে পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা পরদিন সকালে এসব টাটকা সবজি বিক্রি করে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন।  

সবজি চাষকে কেন্দ্র করে এসব অঞ্চলে সারা বছর থাকে কৃষি শ্রমিকের কদর। দৈনিক আড়াই থেকে তিন শত টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করেন এ অঞ্চলের শ্রমিকরা। তবে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তারা পুরুষদের সমান পরিশ্রম করলেও পারিশ্রমিক মিলে অর্ধেকের কিছু বেশি। শ্রমিক সাইদুল, রমিচা ও জলিল জানান, সবজি চাষের ফলে তাদের শ্রম বিক্রিতে কোনো সমস্যা হয় না।  

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিদু ভুষন রায় বাংলানিউজকে জানান, সারাদেশে সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হওয়ায় বাজারে বেগুনের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। কিছুদিন পরে শীতকালীন নানান সবজিতে বাজার ভরে উঠবে। তখন বেগুনের চাহিদা আরো কমে যেতে পারে। তবে লোকসান নয়, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মুনাফা কিছুটা কম হবে বেগুন চাষিদের।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।