ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘নগদ’ ব্যবহারে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
‘নগদ’ ব্যবহারে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি

ঢাকা: প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং-এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লেনদেন সীমা ও ব্যালেন্স নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল অর্থ লেনদেন সেবা ‘নগদ’। প্রস্তাবিত এই লেনদেন সেবা ব্যবহারে নতুন করে মানি লন্ডারিং ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা।

একই সঙ্গে এ খাতের সাথে যুক্ত মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

মোবাইল আর্থিক সেবা খাতের পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে  মানি লন্ডারিং, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রচলিত ব্যবস্থায় একজন গ্রাহক দিনে দুই বারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন এবং ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারেন। সীমা নির্ধারণের ফলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আসে। তবে তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিচালিত  ‘নগদ’ সেবায় একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ১০ বারে জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন। একবারে লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫০০০০ টাকা। সেন্ড মানি বা টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুবিধা ভোগ করবে এই সেবা। যা আবার পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে দেশের আর্থিক খাতকে।

তাছাড়া অবৈধ অর্থ লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য এমএফএস নীতিমালা অনুসারে একটি এনআইডির বিপরীতে একটি কোম্পানির একটি মাত্র একাউন্ট খোলার সুযোগ আছে। ‘নগদ’ পরিচালিত হবে পোস্টাল অ্যাক্ট অনুসারে। সে ক্ষেত্রে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কয়টি ‘নগদ’ একাউন্ট খোলা যাবে তা অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে।

ফলে ‘নগদ’ ব্যবহার করে অনায়াসে বড় অংকের অর্থ লেনদেন করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই বিপুল অংকের অর্থ লেনদেনের সুযোগের কারণে এখাতে অবৈধ লেনদেন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। মানি লন্ডারিংয়ের কারণে অন্যান্য অপরাধও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাছাড়া বিদেশ থেকে অবৈধ পথে রেমিটেন্স আসার পথ সুগম করবে মাত্রাধিক ডিজিটাল অর্থ লেনদেনের এই সুযোগ।

আর্থিক লেনদেনের খাত হিসেবে সঙ্গত কারণেই বিদ্যমান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডাক বিভাগ নিজস্ব আইনে চলায় ‘নগদ’ এর সেবায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাছাড়া অত্যাধুনিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর নতুন ধরনের এই আর্থিক সেবা পরিচালনায় ডাক বিভাগের অভিজ্ঞতা ও রেগুলেটরি গাইডলাইন না থাকায় এ সেবা পরিচালনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে।

মোবাইল ব্যাংকিংকে পরিপূর্ণ সেবায় পরিণত করতে কাজ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। প্রতিষ্ঠানটি মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করতে আন্তার্জাতিক সংস্থা ইগমন্ট গ্রুপের সদস্য এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের (এপিজি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।

এসব আন্তার্জাতিক চুক্তির মাপকাঠিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ তা যাচাই করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে পূর্বের মানি লন্ডারিংয়ের ভয়াবহতা বিবেচনা না করে ব্যাপক অংকের অর্থ লেনদেনের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সাফল্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে উদাহরণ তৈরি করেছে। দেশে বর্তমানে ১৮টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সীমা অব্যাহত রেখে একটি প্রতিষ্ঠানকে এমন সুযোগ দিলে এ খাতে একটি অসম অবস্থা তৈরি করবে। সার্বিকভাবে এই খাত সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করব। এসব কারও একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ‘নগদ’ নামের সেবাটি চালু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখতিয়ারে না থাকায় অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আমরা নিজেরাই সেবাটি চালুর জন্য অগ্রসর হয়েছি। সেবার অধিকাংশ কার্যক্রম এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।  

তবে এই সেবার মাধ্যমে অর্থপাচার বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন হবে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সুশান্ত কুমার মন্ডল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।