ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মুখে যেনো চুন-কালি না পড়ে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৯
মুখে যেনো চুন-কালি না পড়ে সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চাঁদাবাজিতে বাড়ছে পণ্যের দর। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঁদাবাজির বিষয়ে নজরদারির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্যমন্ত্রীও বিষয়টি স্বীকার করলেন এবং জানালেন ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথাও জানালেন তিনি।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ ও বাজার দর বিষয়ক প্রস্তুতি সভায় ব্যবসায়ী-কর্মকর্তা-মন্ত্রী, তাদের বক্তব্যে এমন তথ্য তুলে ধরেন।

সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ঘাট থেকে শুরু করে গুদাম, মিলে পণ্য প্রবেশ ও বের করার সময় চাঁদা দিতে হয়। এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। এর চাপ ব্যবসার ওপর পড়ে, ভোগান্তির স্বীকার হন ভোক্তারা। রমজানে পণ্য মূল্য স্বাভাবিক রাখতে এদিকে নজর রাখতে হবেই।

বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি রংপুর অঞ্চলের মানুষ। রংপুরের বাজারে যে পণ্য ১০ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় তার দাম ৪০ টাকা। আমি জানতে চাইলাম কেনো? তারা লম্বা ফর্দ দেখালেন। এর মধ্যে রাস্তায় হাজারও চাঁদাবাজি। এর মধ্যে পুলিশের চাঁদাবাজি, মালিক সমিতির চাঁদাবাজি,  শ্রমিক সমিতির চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ী সমিতির চাঁদাবাজি, অমুক-তমুক চাঁদাবাজি রয়েছে।

তিনি বলেন, বড় হেডেক এই চাঁদাবাজি। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, চাঁদাবাজি আমরা মানবো না। এর জন্য জনগণের ভোগান্তি হয়। এটা মানা হবে না। এজন্য মনিটরিং সেল হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি মানবো না। প্রতিটি পয়েন্টে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। চাঁদাবাজির জন্য মানুষকে বেশি টাকা দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে হবে কেনো?

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিষয়ক ডিআইজি রুহুল আমিন বলেন, দ্রুত আমরা রমজান নিয়ে মিটিং করবো। চাঁদাবাজির বিষয়ে এমনিতেই সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। রমজান উপলক্ষে আরও নির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। থানা বিষয়টি আমলে না নিলে, জেলা পুলিশ সুপার, এরপরেও কাজ না হলে পুলিশ সদর দফতরে সরাসরি যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

চাঁদাবাজিতে পুলিশের সম্পৃক্ততা বা কার্যকর ভূমিকা পালনে অবহেলার প্রমাণ পেলে যেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তেমন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার ঘোষণা দেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পজেটিভ আছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে কাজ করে আমরা এটা নিয়ন্ত্রেণ করে যাবো। চাঁদাবাজি ঠেকাতে থানা, এসপি লেভেল ছাড়াও প্রয়োজনে আমরা একটি কল সেন্টার করে দেবো। যাতে করে যে কেউ চাঁদাবাজি হচ্ছে, তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসায়ীরা একটি ক্লু দিয়েছেন, সেটা আমরা ফলো করবো। আর সেটা হচ্ছে মিল থেকে যে প্রাইসে পণ্য বিক্রি করা হয়, তা থেকে প্রতি কেজি বা এককে পঞ্চাশ পয়সা হোল সেলাররা লাভ করবেন। এরপর সেই পণ্যের ওপর আড়তদাররা যদি একটি ছোট অংকের লাভ করে ছেড়ে দেন এবং রিটেইলার (খুচরা ব্যবসায়ী) যদি প্রতি কেজি বা এককের পণ্যের ওপর পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচ বিবেচনা করে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা লাভের পর ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করেন, তাহলে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।

মন্ত্রী বলেন, এখানে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা যেটা বলেছেন, এই দামের চেইনটা যদি দেখভাল করা যায়, তাহলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি হবে না। আর আমরা এটা গুরুত্বসহকারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেখবো। আর স্তরভিত্তিক মূল্য চেইনের বিষয়ে ব্যবসায়ীরাও একমত হয়েছেন। এমনকি আড়তদারদের অনেকে বলেছেন, তারা কেজি প্রতি পঞ্চাশ পয়সা লাভ করতে পারলেই যথেষ্ট। ফলে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা আমরা দেখছি না।

‘আমি এখানে দেখছি, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। এখানে ব্যবসায়ীদের মুখ থেকেও একই কথা আসছে। আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারলে এটার সমাধান সম্ভব। আর এটা হতে হবে। ‘

‘আমরা যদি মনে করি রমজান একটি পবিত্র মাস, এই মাসে মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া ঠিক নয়। এটা যদি আমরা মেনটেন করি, তাহলে আল্লাহ তায়ালাও আমাদের ওপর খুশি হবেন। ‘- যোগ করেন মন্ত্রী।

টিপু মুনশি বলেন, আর এসব কিছুই আমরা করতে পারি, বিষয়টিকে যদি আপনারা (ব্যবসায়ীরা) রিলিজিয়াসলি নেন। দুস্থ সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে বিষয়ে আমরা চিন্তা করি। আর আমি একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। যদি ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে আমি বিব্রত হবো। আমি আপনাদের অনুরোধ করি, বাণিজ্যমন্ত্রীর মুখে যেনো চুন-কালি না পড়ে।

তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ী হিসেবে সব সময় টেবিলের ওপারে থেকেছি। মন্ত্রী হিসেবে শপথের পরও সরকারি কর্মকর্তাদের এটা বলেছি। আমি এখনও টেবিলের ওপারেই আছি, যদি আপনারা লিগ্যাল বিষয় নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৯
আরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।