ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মাছ-মাংস অস্বস্তি দিলেও সবজিতে কিছুটা স্বস্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৯
মাছ-মাংস অস্বস্তি দিলেও সবজিতে কিছুটা স্বস্তি

ঢাকা: মাছ ও মাংসের দাম মানুষকে অস্বস্তি দিলেও গত সপ্তাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে সবজি। কারণ গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির দাম একই রকম রয়েছে। নতুন করে বাড়েনি কোনো সবজিরই দাম।

প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা গত মাসে সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছাড়া কোনো মাছ ২০০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না। মাছ ও মাংসের এমন চড়া দামে বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারগুলোতে বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশ মাছ ও মাংসের চাহিদা বেড়েছে। সরবরাহ না বাড়ায় গত সপ্তাহের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গত সপ্তাহ থেকে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়েছে। ফলে সবজির নতুন করে দাম বাড়েনি।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াবাজার, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, শ্যামবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৮০ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আর কক মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে কেজি ৩০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এখন বাজারভেদে কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।

গরুর মাংসের দামের বিষয়ে নয়াবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। প্রতিদিন গরু কিনতে আমাদের খরচ বাড়ছে। ফলে আমরা বাধ্য হচ্ছি মাংসের দাম বাড়াতে। ’

মাংসের দামের পাশাপাশি অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে রুপালি ইলিশ। ছোট আকারের প্রতি কেজি ইলিশ এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের এক হালি (৪টি) ইলিশ পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা, ৮০০ গ্রামের প্রতি হালি ইলিশ চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি ইলিশ দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা।  

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ, দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রায়সাহেব বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী সুমন পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাছের বিক্রি এখনও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ দাম আরও বেড়ে যাবে। এখন আমরা আড়ত থেকে আগের মালই কিনতে পারছি। তাছাড়া এখন তো সেই হারে মাছ ধরা পড়ছে না। তাই আড়তদাররা আগের মাছ দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। আমরাও সেই আগের মাছ বিক্রি করছি। ’

এদিকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নতুন আসা সবজি বরবটির বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পটল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকায়। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।

তুলনামূলক একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পাকা টমেটো, শসা ও গাজর। পেঁপে আগের মতোই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে দেশি পেঁয়াজ। বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্রাপুর বাজারে বাজার করতে আসা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাছ ও মাংসের দাম খুব বেশি। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। প্রতিবছর রোজার সময় আসলেই বিভিন্ন মহল বাজার মনিটরিংয়ে তৎপর হয়। কিন্তু রোজার আগেই যে সব জিনিসের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়, সে বিষয়ে যেন কারোর কোনো ধারণা নেই। জিনিসপত্রের দামের বিষয় দায়িত্বশীল কারও কোনো বক্তব্যও শুনছি না। যতো দুর্ভোগ সব নিম্ন আয়ের মানুষের।

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, চিনি আমদানিকৃত ৫০, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫। তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম। মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এছাড়া খোলা সোয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাঁচ লিটারের প্রতি গ্যালনে রূপচাঁদা ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেশ ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
জিসিজি/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।