ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্ড সুবিধায় আনা কোটি টাকার পণ্যসহ ৩ কাভার্ড ভ্যান জব্দ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
বন্ড সুবিধায় আনা কোটি টাকার পণ্যসহ ৩ কাভার্ড ভ্যান জব্দ জব্দ করা পণ্য দেখছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা/ফাইল ছবি

ঢাকা: বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে সরকার। বন্ড সুবিধায় আমদানিকরা পণ্য চোরাই পথে খোলাবাজারে বিক্রি প্রতিরোধে দিনে-রাতে বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজারে বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান পরিচালনা করার সময় কাস্টমস বন্ড কমিশনারদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন।

একই সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এসময় ঘটনাস্থল থেকে পণ্য বোঝাই তিনটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। যার মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড সুবিধায় আমদানিকরা পণ্য চোরাই পথে খোলাবাজারে বিক্রি প্রতিরোধে দিনে-রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় উপ কমিশনার রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রিভেন্টিভ দল বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর নয়াবাজার, বাবুবাজার ও আরমানিটোলা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ডুপ্লেক্স বোর্ড ভর্তি তিনটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, বাবুবাজারে অভিযান পরিচালনার সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা হামলা চালায়। এতে আমাদের ৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ১৮ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। শত বাধা ও অনিরাপত্তার মধ্যে আমাদের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এজন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

এছাড়া ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনারের নেতৃত্বে সাতটি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে কাজ করছে। রাতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। পরে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যার হাউস বিধিমালা ২০০৮’ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা হয়। একইসঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কিছুটা কমে গেছে।

এ বিষয়ে টিম লিডার উপ কমিশনার রিজভী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভোরের দিকে রাজধানীর আরমানিটোলা, নয়াবাজার ও বাবুবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে একপর্যায়ে আমরা বাবুবাজারে পৌঁছালে দেখতে পাই দেড়শ থেকে দুইশ শ্রমিক কাভার্ড ভ্যান থেকে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড ও কার্ড বোর্ড আনলোড করছে। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালাতে চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এসময় তারা আমাদের উপর ইট-লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে আমাদের ডেপুটি টিম লিডারসহ ১৮ জন আহত হয়।

তিনি বলেন, অভিযানে আমরা পণ্য বোঝাই তিনটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করি। এসব পণ্য মেসার্স ভিটেক লিমিটেডের। পণ্য চালানটি চট্টগাম বন্দর থেকে লোডিং হয়ে ভিটেক গুদামে খালাস হওয়ার কথা থাকলেও অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশে বাবুবাজারের নিয়ে আসা হয়। আটক পণ্যের মূল্য আনুমানিক এক কোটি টাকার উপরে এবং আদায়যোগ্য শুল্ক-করাদির পরিমাণ আনুমানিক ৪৫ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, হামলা ও জব্দ পণ্যের বিপরীতে কাস্টমস আইনে কোতোয়ালি থানায় বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ প্রতিষ্ঠানটির বন্ডিং কার্যক্রম খতিয়ে দেখা মামলার বিষয়বস্তু হবে সরকারি কাজে কর্তব্যরত কর্মকর্তার উপর চোরাকারবারীদের হামলা। অভিযান পরিচালনায় আমাদের সহায়তা করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ, র‍্যাব ও সিআইডি।
 
এনবিআর গ্রেড-১ এর সদস্য সুলতান মো. ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ সুবিধাকে আধুনিকায়ন বা অটোমেশন করা হবে।  হামলা ও জব্দ পণ্যের বিপরীতে কাস্টমস আইনে মামলা দায়েরসহ বন্ডেট প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখবো।

দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের কাগজ এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। মানও ভালো। পাশাপাশি চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে দেশি কাগজ কলগুলোর। তারপরও বন্ড সুবিধার আওতায় বিপুল পরিমাণ কাগজ আসছে বিদেশ থেকে। তাদের অভিযোগ, দেশে উৎপাদিত কাগজের মান-পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলেও আমদানি করা কাগজের মান যাচাই করা হচ্ছে না। ফলে মিথ্যা ঘোষণা আর শুল্কফাঁকি দিয়ে আনা নিম্নমানের বিদেশি কাগজ কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
 
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো পুনঃরফতানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, এসিডিটিক এসিড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউজে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি এবং চোরাকারবারী ঠেকাতে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ২৬টি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে। এতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটন করা হয়েছে। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না এ অসাধু চক্রকে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্যে তারা সয়লাব করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়েও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য। আর বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা।

দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
জিসিজি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।