ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিউইয়র্কে এফএফডি সভা: আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
নিউইয়র্কে এফএফডি সভা: আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই এফএফডি বিষয়ক সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, ছবি: বাংলানিউজ

জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে: বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) আয়োজিত উন্নয়নে অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ক ফোরামের শেষদিনের সভায় বক্তারা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জোর তাগিদ দেন।

বক্তারা বাংলাদেশ-ভারত- নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) নিয়ে গঠিত বিজনেস ফোরামের এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত এবং মিয়ানমারের (বিসিআইএম) মধ্যে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ, ব্যবসা, অর্থায়ন, যোগাযোগ, ব্যবসায়িক যোগাযোগ কার্যকরের তাগিদ দেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর তাগিদ দেন।

এফএফডি ফোরামের শেষদিনে আলোচক হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান। বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বিনির্মাণ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ইউনিয়নের (আইটিইউ) রেগুলেটরি অ্যান্ড মার্কেটিং এনভায়রনমেন্ট ডিভিশনের প্রধান সোফিয়ে ম্যাডেনস এবং জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা'র (আঙ্কটাড)   গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল ট্রেড অ্যানালাইসিস সেকশনের প্রধান্ মিহো শিরোতরি। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সোফিয়ে ম্যাডেনস তার বক্তব্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র শিল্পে নারীদের এগিয়ে আসায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। গত এক দশকে বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে যে উন্নতি হয়েছে, তারও প্রশংসা করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে নতুন নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দেন। সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের সফলতার উদাহরণও উঠে আসে।
 
মিহো শিরোতরি তার বক্তব্যে বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, পণ্যের রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি বিশাল কর্মক্ষম মানুষকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে বিবিআইএন এবং বিসিআইএম’র সহযোগিতা কাঠামোর ওপর জোর দিতে হবে। উন্নত দেশে যেতে হলে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় এবং বাণিজ্যের সুবিধার সমবন্টন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। সেসব বিষয়ের ওপর জোর দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই একটি সার্বজনীন, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, প্রত্যাশিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন এবং ন্যায়সঙ্গত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন তিনি। এছাড়া বাণিজ্য বাধা, বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে ভর্তুকি এবং অন্যান্য বাণিজ্য ক্ষতির পদক্ষেপকে আমলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য গৃহীত ‘দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডার আলোচনা শেষ করার অনুরোধ করেন তিনি।

এছাড়া ডিজিটাল প্লাটফর্ম এবং আর্থিক-প্রযুক্তি এমএসএমইর বাণিজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর একটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন। ই-কর্মাস ওপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে মুখ্যসচিব বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ই-কর্মাসের সম্ভাবনাগুলোর পূর্ণ ব্যবহারে বর্তমান সরকার একটি ডিজিটাল সোসাইটি বিনির্মাণ করেছে।

নজিবুর রহমান বলেন, ই-কমার্সের সুবিধাগুলো ঘরে তুলতে এর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং এর প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টি করতে ‘ইকোসিস্টেম দৃষ্টিকোন’ থেকে আমাদের বাণিজ্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেমন অটোমেশন, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলো ই-কর্মাস প্রসারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। কারণ, বিশ্বের অনেক দেশ এখনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের স্তরে রয়েছে। তিনি উন্নয়নশীল দেশ বা স্বল্পোন্নত দেশ উভয়ের জন্যই এ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া চতুর্থ এফএফডি ফোরামের এ অধিবেশন আন্তঃরাষ্ট্রীয় আলোচনার মাধ্যমে সর্ব সম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
 
এবারের সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার জন্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এমআইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।