ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুরান ঢাকার কেমিক্যালের গোডাউন যাচ্ছে শ্যামপুরে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
পুরান ঢাকার কেমিক্যালের গোডাউন যাচ্ছে শ্যামপুরে গোডাউনে সাজিয়ে রাখা কেমিক্যাল। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। আগুনের ওই ভয়াবহতার জন্য সেখানকার কেমিক্যাল গোডাউনকেই দায়ী করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যে, গোডাউনের অতিদাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। সেই আগুন কেড়ে নেয় ১২৩ জন মানুষের প্রাণ।

নিমতলীবাসীর দাবির মুখে ২০১১ সালে ওই এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন মুন্সিগঞ্জে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগ বাতিল হওয়ার পর কেমিক্যাল গোডাউন কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নিতে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী’ স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

মাঝে দিন গড়িয়ে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আরেকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখতে হয়েছে পুরান ঢাকাবাসীকে। এতেও প্রাণ যায় ৭১ জনের।

এই অগ্নিকাণ্ডের পর ত্বরিত ভিত্তিতে ঘনবসতির পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে শ্যামপুরে।

বিপজ্জনক কেমিক্যাল দ্রব্য সাময়িকভাবে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আওতাধীন শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির নিজস্ব কম্পাউন্ডে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ৭৯ কোটি ৪১ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি সময় থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থায়ীভাবে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের জন্য কোনো জমির অধিগ্রহণের দরকার হবে না। প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি গুদাম নিমতলী থেকে স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি দুইটি অফিস ভবন, একটি মসজিদ, এক লাখ গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ওভারহেড পানির ট্যাংক, একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হবে। ঘণ্টায় এক হাজার লিটার পানি শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন এক-দু’টি ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট), বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদি, ৩০ সিসি ক্যামেরা, নয়টি ফায়ার হাইড্র্যান্টসও স্থাপন করা হবে। নির্মাণ করা হবে প্রশাসনিক ভবন, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার, ফায়ার ব্রিগেড, স্টাফ কোয়ার্টারও। থাকবে সীমানা প্রাচীর, প্রবেশপথ, ডাম্পিং ইয়ার্ড, ড্রেন, বক্স-কালভার্ট, নলকূপ, পানি সরবরাহ লাইনও।

এ বিষয়ে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক খোন্দকার আমিনুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আগের সব প্রকল্প প্রাথমিকভাবে বাদ। নতুন করে ৩১০ একরে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ করা হবে। রাসায়নিকজনিত দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে লক্ষ্যে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বিধায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বৈধ ব্যবসায়ীদের বিপজ্জনক কেমিক্যাল কারখানা শ্যামপুরে সরিয়ে নেওয়া হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার পরে এগুলো পুনরায় সেখানে (কেমিক্যাল পল্লী) নেওয়া হবে।
  
এর আগে নিমতলীর ওই অগ্নিকাণ্ডের পর ২০১১ সালে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য। মুন্সিগঞ্জে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী’ স্থাপনের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
 
২০২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের দ্বিতীয় প্রকল্পটির আওতায় এসিড, বিস্ফোরক এবং বিভিন্ন কেমিক্যালকে তিন ভাগে বিভক্ত করে কেমিক্যাল পল্লীতে তিনটি জোনে নেওয়ার কথা ছিল। প্রত্যেক ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীকে ৪০০ বর্গফুট করে জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল সেই প্রকল্পে। তবে ওই দু’টি প্রকল্প বাতিল করে এখন ৭৯ কোটি ৪১ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ীভাবে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
এমআইএস/এএটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।